শোয়েব চৌধুরী

ছাত্রজীবন থেকেই যার ব্যবসার হাতে খড়ি

মিশিগানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় শোয়েব চৌধুরী একটি পরিচিত নাম। ছাত্রজীবন থেকেই তার ব্যবসার হাতে খড়ি। ২০১৯ এর শেষের দিকে মিশিগানের হ্যামট্রামিকে ছোট একটি অফিস নিয়ে আমেরিকান রিয়েলটি নেটওয়ার্ক নামক কোম্পানি গঠন করেন। এরপর তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিশ্রম ও সততার জন্য তিনি হয়ে ওঠেন রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রির একজন জনপ্রিয় মুখ।

গ্রোসারি স্টোরের ব্যবসা থেকে শুরু। তখন থেকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রতিও ঝোঁক ছিল। সে সময় রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রি এখনকার মত একটা বড় ছিল না। কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। পূর্বের কথাগুলি স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “২০১১ সালের আমি যখন কলেজের ছাত্র। তখন থেকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ছোটখাটো বিনিয়োগ শুরু করি। ২০১৬ রিয়েল স্টেটের লাইসেন্স প্রাপ্তির পর পূর্ণ উদ্যমে ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ি। শুরুর দিকে রিম্যাক্স নামক একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। এখান থেকেই বস্তুতপক্ষে আবাসন ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ক্যারিয়ার শুরু।”

তবে এই ব্যবসায় আসতে তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আজ তিনি সফল। আমরা হয়তো শুধুমাত্র মানুষের সফলতাটাকে দেখি। কিন্তু সফলতা পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক ত্যাগ ও সংগ্রাম। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসা অতটা মসৃণ নয়। অন্য ব্যবসার মত আপনি এখানে প্রতিদিন আয় করতে পারবেন না। টিকে থাকার জন্য আমাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু পরিবার আমার প্রতিকূল অবস্থায় সব সময় সাহস যুগিয়েছে, সফল হবার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তখন ধৈর্য ধারণ করেছি বলেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো টিকে আছি। অবশ্য প্রতিটা সেলস জবে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।” তিনি গর্বের সাথে বলেন, কমিউনিটিতে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে আমেরিকান রিয়েলটি নেটওয়ার্ক। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ক্রিকেট টিমকে তারা স্পন্সর করেছে। এছাড়া খেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে তারা অংশগ্রহণ এবং অবদান রেখে চলেছেন। “আমেরিকান রিয়েলিটি নেটওয়ার্ক একটি কমিউনিটি নির্ভর কোম্পানি। সুতরাং কমিউনিটিতে আমাদের অবদান রাখাটা উচিত। আমরা সেটা সাধ্যমত করছি।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে রিয়েল স্টেট ব্যবসায় কোন বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে। ২০১৫ সালে আমরা যখন ব্যবসা শুরু করেছিলাম তখন বাঙালি রিয়েলটর ছিল ১০-১৫ জন। এখন হবে প্রায় ২০০ জনের অধিক। ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মূল ক্রেতা বাঙালি কমিউনিটির লোকজন। আমাদের উদ্দেশ্য তাদেরকে সঠিক তথ্য দেওয়া এবং একটি সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া।” সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা কিছুটা আবাসন ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যাংকের ইন্টারেস্ট ( প্রায় এভারেজ ৬.৫%) বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সামনের দিকে আরো বাড়বে। এর ফলে যেটা হচ্ছে অধিকাংশ ক্রেতার বাড়ি ক্রয় করার ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। প্রয়োজন না হলে কেউ বাসা নিচ্ছে না। যার কারণে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে একেবারে থেমে নেই। টুকটাক বিক্রি হচ্ছে।”

তার মতে, যার কিছুই নেই তার জন্য একটি বাড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের বাসা নেই তাদেরকে দ্রুত বাসা নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। “আপনি ভাড়া বাসায় থাকলে প্রতি মাসে একটি বড় অংকের অর্থ ব্যয় করছেন। সুতরাং বাড়ি ক্রয় আপনি এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ আমি এখানে নতুন এসেছি, আমার জন্য কেউ কিছু রেখে যায়নি। আমার ছেলের বয়স পাঁচ বছর। আমি যদি ২০০ হাজার ডলারের একটি বাসা নেই এবং ৩০ বছরে ক্রয় নিষ্পন্ন করি, সে ক্ষেত্রে আমার সন্তান একটি বাসা ফ্রি পাচ্ছে। বাসা ভাড়া থেকেও একটা মোটা অংকের অর্থ আসে। এজন্য আমরা বাঙালি যারা তাদেরকে এ দেশের অর্থনৈতিক সিস্টেমের সুবিধা গ্রহণের উপদেশ দেই।”
আমেরিকাতে রিয়েল এস্টেটের পেশা এবং ব্যবসা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও লাভজনক। নতুনদের কেউ এ পেশায় আসতে চাইলে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমেরিকা হলো ল্যান্ড অফ অপরচুনিটি। এখানে সুযোগের অভাব নাই, কাজেরও কোন অভাব নাই। সুতরাং এ পেশায় যারা আসতে চায় তাদেরকে ওয়েলকাম করি।”

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *