ঢাকা ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লেখক ইশতিয়াক রুপু’র স্মৃতিচারনমূলক গদ্যের বই ‘জলজোছনার জীবনপত্র’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফ্যাশন ও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে পণ্য তৈরিতে জোর হুয়াওয়ের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের জন্য অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ দল প্রবাসে দলাদলি, মারামারি, রক্তারক্তি আর কত? এতে বাঙালি কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের (এমডি) অ্যানা বেজার্ড এর বিপিএল এর কিছু প্লেয়ার এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কোচ হাথুরু বসে বসে কাজ, ডেকে আনে সর্বনাশ বড়লেখায় ভাষা শহীদদের প্রতি নিসচা’র শ্রদ্ধা নিবেদন: নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ প্রতিদিন শ্যাম্পু করা ও হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার কি চুলের ক্ষতি করে? রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ কী?

কমিউনিটির অগ্রগতি ও উন্নয়নে সর্বদা পাশে আছেন ফয়সল আহমেদ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২ ০ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এর প্রজেক্ট পরিচালক এবং বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (মিশিগানে ডেমোক্রেটিক দলের একটি সহযোগী সংঘ) যার বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ বাংলাদেশি কমিউনিটির অগ্রগতি ও উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য।

কাজ করার সুপ্ত বাসনা শৈশবে দানা বাধে তাঁর অন্তরে এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে মার্কিন মুল্লুকে। আমেরিকার মূলধারার পেশা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশিদের ক্রমশ উত্থান ঘটছে। সেই উত্থানে যুক্ত হয়েছে ফয়সল আহমেদ নামটিও। স্বপ্রনোদিত হয়ে নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন কমিউনিটির সেবায়।

ফয়সল আহমেদের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। পিতা মইনুদ্দিন আহমেদ ও মাতা আয়েশা খাতুনের সাত সন্তানের একজন ফয়সল আহমেদ।

চার ভাই এবং তিন বোনের পরিবারে তিনি খুবই আদরের। লেখাপড়ার হাতেখড়ি সিলেটে। সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক এবং সিলেটের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকায় শিক্ষাজীবন শেষে পাড়ি জমান আমেরিকায়। ১৯৯০ সালে কর্মজীবন শুরু হয় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে।

আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল ক্যাফে নামে এক রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানে বাঙালির পাশাপাশি আমেরিকানরাও কাজ করতো।

এখানে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ফয়সল আহমেদ কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে গড়া সংগঠন ‘লোকাল শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর একজন প্রতিনিধি ছিলেন।

এই শ্রমিক ইউনিয়নের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বাংলাদেশি শ্রমিকেরা কোনো ধরণের সমস্যায় পড়লে দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতেন।

মূলত এই শ্রমিক ইউনিয়নে কাজ করতে গিয়েই বাংলাদেশি কমিউনিটির অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। নিউইয়র্কে বিভিন্ন রকম কাজের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন ফয়সল আহমেদ।

এক দশক তিনি নিউইয়র্কে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে তাঁর প্রথম উপার্জন ছিলো একটি ট্যুর কোম্পানিতে। সেখানে সপ্তাহে তিনি ২০০ ডলার বেতনে কাজ করতেন।

বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে তাঁর ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বেশ আনন্দের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানে অনেকদিন কাজ করেছেন।

প্রবল আত্মবিশ্বাস আর কর্মস্পৃহা ফয়সল আহমেদের জীবনে এনে দিয়েছে সাফল্য। ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আজও তিনি মনেপ্রাণে ধারণ করেন। স্বদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মাটি ও মানুষের কথা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে। সেইসাথে রয়েছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা।

নিজের মেধা, মনন, চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে আজ তিনি সফল। এই সফলতার পেছনে ব্যর্থতার গল্পও আছে, তবে প্রতিটি ব্যর্থতাই শক্তি যুগিয়েছে ফয়সল আহমেদের পথচলায়। বাঙালি কমিউনিটি নির্দিষ্ট একটি বলয়ের মধ্যে থাকতে চায়।

এই বলয় ভেঙে ফয়সল আহমেদ ভিনদেশীদের সঙ্গে সমান্তরাল সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশি কমিউনিটির সার্বিক অধিকার ও উন্নয়নের পথকে সুগম করছেন।

জীবন চলার পথে হরেক ধরণের চড়াই উতরাই দেখেছেন, তাই নিজেকে কখনও হতাশায় ডুবতে দেননি বরং খারাপ সময় শেষে ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন, হেঁটেছেন ধীরলয়ে। অসংখ্য মানুষ সেই পথে বাধা হয়ে এসেছে কিন্তু সেগুলো ডিঙিয়ে তিনি আজও কর্মমূখর।

প্রায় এক দশক আমেরিকার নিউইর্য়ক শহরে কাটিয়ে ২০০১ সালে মিশিগানে পাড়ি জমান ফয়সল আহমেদ। প্রথমে মিশিগানে ডেট্রয়েট শহরে বসবাস করেন। মাস সাতেক পর তিনি একটি বাড়ি ক্রয় করে স্থায়ী বসবাসের লক্ষ্য নিয়ে ওয়ারেন শহরে বসবাস শুরু করেন। মিশিগানে এসে প্রথমে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন তিনি।

তারপর মিশিগানের ট্রয় শহরে একটা আমেরিকান কোম্পানিতে কাজের অফার পেয়ে সেখানে কাজ করেন। অতঃপর বিভিন্ন কাজের পথ মাড়িয়ে তিনি সামাজিক কর্মযজ্ঞে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে সিটি অব ওয়ারেনের রিভিউ বোর্ডের একজন ভাইস চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি সিটির কমিশনার। একটি সিটিতে বিভিন্ন কমিশন থাকে।

যেমন প্ল্যানিং কমিশন, বিল্ডিং কমিশন এবং বিউটিফিকেশন কমিশন। বিভিন্ন কমিশনের কাজও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কোন কমিশনে কমিশনার থাকেন পাঁচজন আবার কোন কমিশনে থাকেন তিনজন। কমিশনারের কাজ হচ্ছে যখন কমিশন নতুন কোন কিছু করতে চায় তখন সেগুলোর উপর যে ভোটাভুটি হয় এই ভোটাভুটির মধ্যে অংশগ্রহণ করা।

সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে কমিশনের যেকোন বিল পাস করাতে হয়। ফয়সল আহমেদ ২০২১ সাল থেকে কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস অব মেট্রো ডেট্রয়েট সাথে যুক্ত হন।

নিউইয়র্কে শ্রমিক ইউনিয়নের মেম্বার হিসেবে কাজের সুবাদে বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তারই ধারাবাহিকতায় মিশিগানে এসেও তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন দাবি আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন।

কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি উচ্চ পদে আসীন হন এবং উচ্চ পদে থাকার ফলে বহু সংখ্যক বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান তৈরি করে দেন। ফয়সল আহমেদ ২০১৯ সালে সিটি অব ওয়ারেনের মেয়রের অনুরোধে ওয়ারেন সিটির একটি কমিশনের বোর্ড অব রিভিউতে একজন মেম্বার হিসেবে যোগদান করেন।

বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করতেই তিনি সানন্দে এই পদ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সিটি অব ওয়ারেনে ২০২০ সালে ‘সিটিজেন পুলিশ একাডেমি’ থেকে গ্রেজুেয়শন সম্পন্ন করেন। মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) যখন মিশিগানে ছড়ালো তখন কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস অব ডেট্রয়েট এর বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ফয়সল আহমেদ। এটি ঐতিহ্যবাহী অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান।

মিশিগানে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করে আসছে। আল ফাতাহ মসজিদে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফয়সল আহমেদ। কমিউনিটির লোকজনদেরকে নানাভাবে উৎসাহ যোগান করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করার জন্য। করোনাকালীন বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য ফয়সল আহমেদ বেশ প্রশংসা পান।

তিনি ২০২১ সাল থেকে কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিসের একটি প্রজেক্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তিনি কমিউনিটিতে নেভিগেটরের ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশি লোকজনদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে যাদের মেডিকেল কেয়ার নেই তাদেরকে ফ্রি মেডিকেল কেয়ার দেওয়া হয়ে থাকে।

এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সকল ধরনের সেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এর সাবেক প্রজেক্ট পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলামের কর্মমূখরতা উৎসাহ যোগায় ফয়সল আহমেদকে। বর্তমানে ফয়সল আহমেদ এই কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এর প্রজেক্ট পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

আমেরিকার এমএসসি কোম্পানিতে সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘ বিশ বছর দক্ষতার সাথে কাজ করেন ফয়সল আহমেদ। সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছেন। ফয়সল আহমেদ যুক্ত রয়েছেন আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে। নিজ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে নিজেকে বলিষ্ট ভূমিকায় রাখতে চান তিনি। গণ্ডিতে বন্দী থাকার লোক নন তিনি বরং নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকতে চান। নিজের চেনাজানা মানুষগুলোর নিকট হতে মাঝেমধ্যে অনেক কটু কথা শুনতে হয়, আড়ালে আবডালে অনেকেই বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে নানান গল্প তৈরি করেন এসবে একটুও বিচলিত নন ফয়সল আহমেদ বরং এইসব নেতিবাচক সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল।

ফয়সল আহমেদ মনে করেন মিশিগানে ক্রমবর্ধমান বাঙালির বসবাসে এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে ওঠেছে নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা। সেইসাথে নিজেকে যোগ্য করে তোলার বিকল্প নেই। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বদলে দিতে পারে ভবিষ্যত। মূলধারার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাঙালির উচ্চ পদে আসীন থাকাকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন তিনি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ফয়সল আহমেদ।

তিনি দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করেন, কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে চিরকাল। তাই তিনি মানুষের মধ্যে নিজের কর্ম নিয়েই বেঁচে থাকতে চান।

আরও পড়ুনঃ দেশমাতৃকার তরে এখনও সজীব পীরজাদা হোসেন আহমদ

নিউজটি শেয়ার করুন

কমিউনিটির অগ্রগতি ও উন্নয়নে সর্বদা পাশে আছেন ফয়সল আহমেদ

আপডেট সময় : ০১:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এর প্রজেক্ট পরিচালক এবং বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (মিশিগানে ডেমোক্রেটিক দলের একটি সহযোগী সংঘ) যার বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ বাংলাদেশি কমিউনিটির অগ্রগতি ও উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য।

কাজ করার সুপ্ত বাসনা শৈশবে দানা বাধে তাঁর অন্তরে এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে মার্কিন মুল্লুকে। আমেরিকার মূলধারার পেশা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশিদের ক্রমশ উত্থান ঘটছে। সেই উত্থানে যুক্ত হয়েছে ফয়সল আহমেদ নামটিও। স্বপ্রনোদিত হয়ে নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন কমিউনিটির সেবায়।

ফয়সল আহমেদের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। পিতা মইনুদ্দিন আহমেদ ও মাতা আয়েশা খাতুনের সাত সন্তানের একজন ফয়সল আহমেদ।

চার ভাই এবং তিন বোনের পরিবারে তিনি খুবই আদরের। লেখাপড়ার হাতেখড়ি সিলেটে। সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক এবং সিলেটের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকায় শিক্ষাজীবন শেষে পাড়ি জমান আমেরিকায়। ১৯৯০ সালে কর্মজীবন শুরু হয় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে।

আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল ক্যাফে নামে এক রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানে বাঙালির পাশাপাশি আমেরিকানরাও কাজ করতো।

এখানে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ফয়সল আহমেদ কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে গড়া সংগঠন ‘লোকাল শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর একজন প্রতিনিধি ছিলেন।

এই শ্রমিক ইউনিয়নের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বাংলাদেশি শ্রমিকেরা কোনো ধরণের সমস্যায় পড়লে দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতেন।

মূলত এই শ্রমিক ইউনিয়নে কাজ করতে গিয়েই বাংলাদেশি কমিউনিটির অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। নিউইয়র্কে বিভিন্ন রকম কাজের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন ফয়সল আহমেদ।

এক দশক তিনি নিউইয়র্কে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে তাঁর প্রথম উপার্জন ছিলো একটি ট্যুর কোম্পানিতে। সেখানে সপ্তাহে তিনি ২০০ ডলার বেতনে কাজ করতেন।

বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে তাঁর ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বেশ আনন্দের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানে অনেকদিন কাজ করেছেন।

প্রবল আত্মবিশ্বাস আর কর্মস্পৃহা ফয়সল আহমেদের জীবনে এনে দিয়েছে সাফল্য। ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আজও তিনি মনেপ্রাণে ধারণ করেন। স্বদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মাটি ও মানুষের কথা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে। সেইসাথে রয়েছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা।

নিজের মেধা, মনন, চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে আজ তিনি সফল। এই সফলতার পেছনে ব্যর্থতার গল্পও আছে, তবে প্রতিটি ব্যর্থতাই শক্তি যুগিয়েছে ফয়সল আহমেদের পথচলায়। বাঙালি কমিউনিটি নির্দিষ্ট একটি বলয়ের মধ্যে থাকতে চায়।

এই বলয় ভেঙে ফয়সল আহমেদ ভিনদেশীদের সঙ্গে সমান্তরাল সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশি কমিউনিটির সার্বিক অধিকার ও উন্নয়নের পথকে সুগম করছেন।

জীবন চলার পথে হরেক ধরণের চড়াই উতরাই দেখেছেন, তাই নিজেকে কখনও হতাশায় ডুবতে দেননি বরং খারাপ সময় শেষে ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন, হেঁটেছেন ধীরলয়ে। অসংখ্য মানুষ সেই পথে বাধা হয়ে এসেছে কিন্তু সেগুলো ডিঙিয়ে তিনি আজও কর্মমূখর।

প্রায় এক দশক আমেরিকার নিউইর্য়ক শহরে কাটিয়ে ২০০১ সালে মিশিগানে পাড়ি জমান ফয়সল আহমেদ। প্রথমে মিশিগানে ডেট্রয়েট শহরে বসবাস করেন। মাস সাতেক পর তিনি একটি বাড়ি ক্রয় করে স্থায়ী বসবাসের লক্ষ্য নিয়ে ওয়ারেন শহরে বসবাস শুরু করেন। মিশিগানে এসে প্রথমে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন তিনি।

তারপর মিশিগানের ট্রয় শহরে একটা আমেরিকান কোম্পানিতে কাজের অফার পেয়ে সেখানে কাজ করেন। অতঃপর বিভিন্ন কাজের পথ মাড়িয়ে তিনি সামাজিক কর্মযজ্ঞে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে সিটি অব ওয়ারেনের রিভিউ বোর্ডের একজন ভাইস চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি সিটির কমিশনার। একটি সিটিতে বিভিন্ন কমিশন থাকে।

যেমন প্ল্যানিং কমিশন, বিল্ডিং কমিশন এবং বিউটিফিকেশন কমিশন। বিভিন্ন কমিশনের কাজও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কোন কমিশনে কমিশনার থাকেন পাঁচজন আবার কোন কমিশনে থাকেন তিনজন। কমিশনারের কাজ হচ্ছে যখন কমিশন নতুন কোন কিছু করতে চায় তখন সেগুলোর উপর যে ভোটাভুটি হয় এই ভোটাভুটির মধ্যে অংশগ্রহণ করা।

সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে কমিশনের যেকোন বিল পাস করাতে হয়। ফয়সল আহমেদ ২০২১ সাল থেকে কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস অব মেট্রো ডেট্রয়েট সাথে যুক্ত হন।

নিউইয়র্কে শ্রমিক ইউনিয়নের মেম্বার হিসেবে কাজের সুবাদে বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তারই ধারাবাহিকতায় মিশিগানে এসেও তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন দাবি আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন।

কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি উচ্চ পদে আসীন হন এবং উচ্চ পদে থাকার ফলে বহু সংখ্যক বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান তৈরি করে দেন। ফয়সল আহমেদ ২০১৯ সালে সিটি অব ওয়ারেনের মেয়রের অনুরোধে ওয়ারেন সিটির একটি কমিশনের বোর্ড অব রিভিউতে একজন মেম্বার হিসেবে যোগদান করেন।

বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করতেই তিনি সানন্দে এই পদ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সিটি অব ওয়ারেনে ২০২০ সালে ‘সিটিজেন পুলিশ একাডেমি’ থেকে গ্রেজুেয়শন সম্পন্ন করেন। মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) যখন মিশিগানে ছড়ালো তখন কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস অব ডেট্রয়েট এর বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ফয়সল আহমেদ। এটি ঐতিহ্যবাহী অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান।

মিশিগানে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করে আসছে। আল ফাতাহ মসজিদে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফয়সল আহমেদ। কমিউনিটির লোকজনদেরকে নানাভাবে উৎসাহ যোগান করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করার জন্য। করোনাকালীন বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য ফয়সল আহমেদ বেশ প্রশংসা পান।

তিনি ২০২১ সাল থেকে কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিসের একটি প্রজেক্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তিনি কমিউনিটিতে নেভিগেটরের ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশি লোকজনদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে যাদের মেডিকেল কেয়ার নেই তাদেরকে ফ্রি মেডিকেল কেয়ার দেওয়া হয়ে থাকে।

এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সকল ধরনের সেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এর সাবেক প্রজেক্ট পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলামের কর্মমূখরতা উৎসাহ যোগায় ফয়সল আহমেদকে। বর্তমানে ফয়সল আহমেদ এই কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এর প্রজেক্ট পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

আমেরিকার এমএসসি কোম্পানিতে সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘ বিশ বছর দক্ষতার সাথে কাজ করেন ফয়সল আহমেদ। সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছেন। ফয়সল আহমেদ যুক্ত রয়েছেন আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে। নিজ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে নিজেকে বলিষ্ট ভূমিকায় রাখতে চান তিনি। গণ্ডিতে বন্দী থাকার লোক নন তিনি বরং নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকতে চান। নিজের চেনাজানা মানুষগুলোর নিকট হতে মাঝেমধ্যে অনেক কটু কথা শুনতে হয়, আড়ালে আবডালে অনেকেই বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে নানান গল্প তৈরি করেন এসবে একটুও বিচলিত নন ফয়সল আহমেদ বরং এইসব নেতিবাচক সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল।

ফয়সল আহমেদ মনে করেন মিশিগানে ক্রমবর্ধমান বাঙালির বসবাসে এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে ওঠেছে নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা। সেইসাথে নিজেকে যোগ্য করে তোলার বিকল্প নেই। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বদলে দিতে পারে ভবিষ্যত। মূলধারার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাঙালির উচ্চ পদে আসীন থাকাকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন তিনি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ফয়সল আহমেদ।

তিনি দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করেন, কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে চিরকাল। তাই তিনি মানুষের মধ্যে নিজের কর্ম নিয়েই বেঁচে থাকতে চান।

আরও পড়ুনঃ দেশমাতৃকার তরে এখনও সজীব পীরজাদা হোসেন আহমদ