শিল্প ও সংস্কৃতি

অস্ট্রেলিয়ার বাঙালিপাড়ায় ইফতারি বাজার

বিগত বছরগুলোর মতো এবারও রোজায় বেশ জমকালো আয়োজন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাঙালি অধ্যুষিত ল্যাকেম্বার ইফতারির বাজার। প্রায় এক যুগ আগে শুরু হওয়া এই ইফতারির বাজারে বাংলাদেশি ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে এই উৎসবে মিলিত হন।

বিকেল থেকেই সিডনির ল্যাকেম্বায় ইফতারের আয়োজন শুরু হয়। ভোজনরসিকদের দেশীয় খাবার চেখে দেখা চলে শেষ রাত পর্যন্ত। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে বাংলাদেশিরা জড়ো হন এই ইফতারে।

ল্যাকেম্বায় যেমন অনেক বেশি বাংলাদেশির বাস, অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি মুসলিম ও বহুজাতিক প্রবাসীদেরও বসবাস। সব মিলিয়ে সিডনির ল্যাকেম্বায় ইফতারির বাজার সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রাণবন্ত ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময়। সূর্যাস্তের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে নানা রঙের মানুষের ভিড়।

ল্যাকেম্বার ফুটপাত থেকে শুরু করে নামীদামি রেস্তোরাঁগুলোয় থাকে ইফতারের আয়োজন।

লোকমুখে শোনা যায়, এক যুগ আগে মাত্র একটি বারবিকিউ দোকানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ল্যাকেম্বার হ্যালডন স্ট্রিট আর রেলওয়ে প্যারেডের ইফতারির বাজার। তারপর আসে তুর্কির সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী কুনাফির সঙ্গে উটের বার্গার, জনপ্রিয় করে তোলে এই ইফতারির বাজার। আর এখন অনেক স্থানীয় ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসাকে সন্ধ্যায় পরিবর্তন করেন ইফতারির বাজারে।

বাংলাদেশ ছাড়াও তুরস্ক, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, কোকো দ্বীপ, সিরিয়া, আরবসহ আরও অনেক দেশের খাবারের পাওয়া যায় এই ইফতারির বাজারে। আর ইফতারির বাজারের বর্তমানে এতই খ্যাতি যে মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ইফতারির স্বাদ নিতে ভিড় করেন সন্ধ্যা হলেই।

বাংলাদেশি খাবারের মধ্যে রয়েছে আমাদের অতি পরিচিত পেঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, গুঘনি, আলুর চপ, জালিকাবাব, হালিম। তাছাড়াও পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম বেসনে ভাজা খাবার, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি, বিভিন্ন রকম মিষ্টিসহ রকমারি ইফতারির সমারোহ। অন্য দেশেগুলোর জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে রুটির সঙ্গে ডাল ভুনা, মালয়েশিয়ার মুর্তাবাক আর হালিম, পাকিস্তানের ‘তরকারির রাজা’ চার পদের মাংসের তরকারি, উটের বার্গার, গাজরের জুস, মধ্যপ্রাচ্যের পনিরের মিষ্টান্ন আর তুর্কিদের ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবার আর এর বিচিত্র পরিবেশন।

ইফতারির বাজারে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিরাই আসেন পরিবার-পরিজনদের নিয়ে। এক বাংলাদেশি প্রবাসী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বাংলাদেশে আমাদের ঘরে মা-চাচিদের ইফতারি বানাতে দেখে বড় হয়েছি। যদিও এখন এই চিত্রটা পাল্টে গেছে। এখন ইফতারির বাজার আমাদের সংস্কৃতিতে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে।’

তিনি বলছিলেন, আপনি যদি বাংলাদেশে নিয়মিত বাইরে ইফতারি কিনতে অভস্ত্য হন, তাহলে ল্যাকেম্বায় আপনি ভুলেই যাবেন আপনি বিদেশে আছেন। পরিবার নিয়ে পরিচিত খাবার খেয়ে একটু সময় পার করতে পারার একটা আনন্দও পাওয়া যায় এই ইফতারির বাজারে। তবে এই কথা মাথায় রেখে আসা ভালো পুরান ঢাকার মতোই এখানেও প্রচণ্ড ভিড় হয় ।

Back to top button