যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলম্যান নিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান মুহিত মাহমুদ। ২০২১ সালের ২ নভেম্বর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুহিত মাহমুদের সঙ্গে তুমুল হাডাহাড্ডি লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেনি, বসুনিয়া ও বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকটি দেশের বংশোদ্ভূত নাগরিকদের ভোটে সংশ্লিষ্ট সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন এডাম আল বামাকি। কিন্তু তিনি মিশিগান থেকে অন্য একটি প্রদেশে বসবাসের জন্য সম্প্রতি পদত্যাগ করেন।
ফলে নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশি মুহিত মাহমুদকে কাউন্সিলম্যান হিসেবে নিযোগ দেওয়া হয়। কাউন্সিলম্যান চার বছরের জন্য এই পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কর্মক্ষেত্রের দক্ষতা দিয়ে মুহিত মাহমুদ মানুষের মন জয় করেছেন বহু আগেই এবার হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলে কাউন্সিলম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়বেন তিনি।
সেইসাথে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মানোন্নয়নের পাশাপাশি হ্যামট্রামেক সিটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন এমনটাই আশা করেন বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজন। হ্যামট্রামিকের জনগণের সেবায় এমন দায়িত্ব ন্যস্ত হওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান মুহিত মাহমুদ মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। পিতা গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত ফরেস্ট রেঞ্জার (মরহুম) শেখ আব্দুল মতিন ও মাতা (মরহুমা) শেখ হোসনে আরার গর্বিত সন্তান মুহিত মাহমুদ কেবল মিশিগান তথা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন নয় বরং নিজ জন্মভূমির যেকোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজেকে রেখেছেন সম্পৃক্ত।
তিনি বিবাহিত জীবনে তিন সন্তানের জনক। দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্ত্রী ফাতিমা মাহমুদ চৌধুরীকে নিয়ে সুখের সংসার।
মুহিত মাহমুদ সিলেটের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে বি.এ. সম্পন্ন করেন তখন এমসি কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল এবং তিনি ছিলেন শেষ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
মুহিত মাহমুদ ১৯৯৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। শুরুতে নিউইয়র্কে ছিলেন। পরবর্তীতে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে আসেন এবং একটি কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হন। সেই কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন আন্ডার গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন মুহিত মাহমুদ। কমিউনিটির সার্বিক উন্নয়নে সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করেন।
গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে এখনও সামাজিক এ সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজের জন্ম এলাকার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্যে করে অনন্য নজির স্থাপন করেছে গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস ইউএসএ। প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুস্থদের মাঝে রিকশা বিতরণ, করোনা মহামারি ও বন্যার সময় বিপন্ন মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী প্রদানসহ গত পাঁচ বছরে মানবকল্যাণে কোটি টাকার সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে মিশিগান হতে পরিচালিত এ সংগঠন যার নেতৃত্বে রয়েছেন মুহিত মাহমুদ।
এছাড়াও তিনি মিশিগানে ডেমোক্রেটিক দলের একটি সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাসের আমি এক মেয়াদে দুই বছর জন্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওই পদে থাকা অবস্থায় কমিউনিটির উন্নয়নে সফলভাবে কাজ করেন। মিশিগানে বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটিকে স্থানীয় রাজনীতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন সম্মান এবং পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য শাইনিং স্টার পুরস্কার, স্টার অব শো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আমেরিকার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে কিভাবে পরিচালনা পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায় এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করানো সেই বিষয়ে সদা তৎপর তিনি।
শত ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দেন তিনি। সপ্তাহে অন্তত একবার পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হন। স্কুল জীবনের বন্ধু আজিজ চৌধুরী রুমু ও অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে অবসর সময় উপভোগ করেন মুহিত মাহমুদ। আমেরিকার প্রবাস জীবনে যেমন রয়েছে অজস্র সুখের স্মৃতি তেমনি দুঃখেরও রয়েছে অনেক গল্প। আমেরিকাতে বসবাসের কারণে পিতা-মাতার কাছে তাঁদের জীবনের শেষ দিনগুলোতে পাশে থাকতে না পারার কষ্ট ভীষণ পীড়া দেয় মুহিত মাহমুদকে। মুহিত মাহমুদ নিজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন মানুষের ভালোবাসা।
মুহিত মাহমুদ তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান কেননা তিনি মনে করেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিক সবই হচ্ছে কিন্তু রাজনীতিবিদ হওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। সমাজ বদলের ক্ষেত্রে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষেই আমেরিকাতে এসে বেশ সহযোগিতা পান জিল্লুর রহমান, শেখ আতিউল ইসলাম সহ অনেকের কাছ থেকে।
বিশেষ করে যাদের সান্নিধ্যে নিউ ইয়র্কে ছিলেন তাঁদের প্রায় সকলেই রাজনীতি ও সমাজসেবায় সম্পৃক্ত ছিলেন তাই সেখানেই বীজ বুনেছেন মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে নিবেদিত থাকার।
মিশিগানে আসার পর রীতিনীতির মাঠে চলার পথে অনুপ্রেরণা যোগান ড. নাজমুল হাসান শাহীনসহ অনেকেই। পেশাগত ক্ষেত্রে কমিউনিটির বিভিন্ন রকমের মানুষের সাথে চলাফেরা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সুসম্পর্ক।
সে সুবাদে খুব কাছ থেকে জেনে নিতে পেরেছেন মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো। একজন অভিবাসী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়েছেন মানুষের কল্যাণে।
সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রাণবন্ত মুহিত মাহমুদের অফুরন্ত কর্মস্পৃহা তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। কর্মজীবনে অনেকের উৎসাহ উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি কমিউনিটির মানুষের সার্বিক উন্নয়নে বিরামহীন কাজ করে চলেছেন।
নিজের কাজের শক্তি মানুষের ভালোবাসা এটাই মনে করেন তিনি এবং এক্ষেত্রে তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন কমিউনিটির মানুষের সাপোর্ট।
মন্তব্য করুন