১৮ ও ১৯ নভেম্বর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবারের সম্মেলনে অংশ নেবেন।
বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী ঝুঁকি, চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘর্ষ এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটসহ ধারাবাহিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে বহুপাক্ষিক মঞ্চে চীনা শীর্ষনেতার অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় রয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ।
তাতে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি চীনা শক্তি প্রবেশ করবে। তাদের চোখে ‘চীনা শক্তি’ ইতোমধ্যেই অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
‘থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে আসন্ন ২৯তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে এপেকের উদ্যোক্তা দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর থাইল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতা। তার জন্য প্রস্তুত থাইল্যান্ড।
চীন হচ্ছে এপেকের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ, থাইল্যান্ড আগের মতো ভবিষ্যতেও এপেকের কাঠামোতে চীনের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক আদান-প্রদান জোরদার করবে। অব্যাহতভাবে থাইল্যান্ড ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেবে।’
চলতি বছর হল চীনের এপেকে যোগদানের ৩১তম বার্ষিকী। বিগত ৩১ বছরে চীন উন্মুক্তকরণের মনোভাব নিয়ে বিশ্ব এবং এপেকের বিভিন্ন সদস্য দেশের সঙ্গে চীনের উন্নয়নের সুযোগ ভাগাভাগি করেছে। সক্রিয়ভাবে এপেকের আঞ্চলিক সহযোগিতায় অংশ নিয়েছে চীন। এটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমাজের অগ্রগতি এবং জীবিকার উন্নয়নে সহায়তা করেছে।
ফিলিপিন্সের ‘এশিয়ান বিজনেস উইক’-এর সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার এপেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বা সভাপতিত্ব করেছেন। এর মধ্য দিয়ে এপেকের অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চীনের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। আমরা চাই যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ দিন দিন বেড়ে যাওয়ার পটভূমিতে এবারের এপেক সম্মেলনে আরও বেশি চীনা বুদ্ধি ও প্রস্তাব উত্থাপন করবেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি’।
দক্ষিণ কোরিয়ার চীনা অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক বলেছেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা স্পষ্টভাবে বেড়েছে। চীন অব্যাহতভাবে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের সম্প্রসারণ করেছে।
চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাসহ বহু প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে, এটি এশীয় দেশগুলোর জন্য এক বিশাল উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং এপেকের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এপেকের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের অন্যতম হিসেবে এপেকের মাধ্যমে চীনের আরও ভূমিকা পালনের প্রত্যাশায় রইলাম।’
এপেক হচ্ছে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীনের অংশগ্রহণের প্রথম আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা। এটিও অর্থনীতির বিশ্বায়নে চীনের গভীরতর অংশগ্রহণের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
এপেকে যোগদানের পর বিগত ৩১ বছরে চীন অব্যাহতভাবে বৈদেশিক ও উন্মুক্তকরণের ধাপকে এগিয়ে নিয়েছে। দেশটির গড় শুল্কের পরিমাণ ৩৯.৫ শতাংশ থেকে নেমে ৭.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত, এপেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২.৮৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি কেবল এতদঞ্চলের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং তা বিশ্বের ভবিষ্যতের সঙ্গেও জড়িত।
এই অঞ্চলের দৃঢ় সমর্থক ও প্রচারক হিসেবে চীন নিজের উন্নয়ন ও আঞ্চলিক উন্নয়নে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়নকে এগিয়ে নিচ্ছে। এটি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সহযোগিতার উন্নয়নে নিজের অবদান রেখেছে’।
এবারের এপেক শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চীনা শৈলীর আধুনিকায়নের দৃঢ় সারবস্তু গভীরভাবে উপলব্ধি করার প্রত্যাশায় রয়েছে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষ। তাতে বিভিন্ন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাও প্রদান করবে চীন।
(ওয়াং হাইমান ঊর্মি, সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।)
আরও পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা শুধু চীনের নয়, বরং গোটা বিশ্বের
মন্তব্য করুন