২২ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশন চলাকালে, সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও জেনিভায় জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী মিশন যৌথভাবে এক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
এতে চীনের সিনচিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হয়। ৫০টিরও বেশি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক, সাংবাদিক, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির পরিচালক জিয়াওকাইতি ইমিং বলেন, সিনচিয়াং একটি ভাল জায়গা। এখানে সর্বদা সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সবাইকে সিনচিয়াংয়ে স্বাগত।
“সিনচিয়াং আইন অনুসারে সামাজিক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়নকাজ ত্বরান্বিত করে, জনগণের জীবনমান উন্নত করে, জাতিগত ঐক্য সুসংহত রাখে, ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করে। সকল জাতিগোষ্ঠীর চমত্কার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সুরক্ষা করা হয় এখানে। সিনচিয়অং বহির্বিশ্বের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করার গতি বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। এটি ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবর দেশগুলোর মধ্যে আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হয়ে উঠেছে। সবাইকে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। ঘটনাস্থলেই সিনচিয়াংয়ের সুরেলা, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ উন্নয়ন অনুভব করতে এবং সিনচিয়াং-এ মানবাধিকার উন্নয়নকাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সাক্ষী হতে সিনচিয়াংকে সামনে থেকে দেখুন।”
জেনিভায় জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত চেন চু বলেন, চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সর্বদা জনগণের আধিপত্য মেনে চলে এবং জনগণের উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষাকে সংগ্রামের লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে। কিছু পশ্চিমা দেশের ঘৃণ্য প্রচারণা তাই ব্যর্থ হবে:
“অবিরাম প্রচেষ্টার মাধ্যমে, সিনচিয়াংয়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবাধিকার উন্নয়ন খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখানকার সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আগের চেয়ে ভাল জীবন যাপন করছে। কিছু পশ্চিমা দেশ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, ইচ্ছাকৃতভাবে সিনচিয়াংয়ের মানবাধিকার খাতের অর্জনকে উপেক্ষা করে এবং সিনচিয়াং সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে বানোয়াট খবর ছড়ায়। এসবই মিথ্যা ও মিথ্যা তথ্য। এই দেশগুলো সংঘাত ও বিভাজনকে উস্কে দিতে মানবাধিকারকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের দৃঢ় বিরোধিতা করা অব্যাহত থাকবে। তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”
সভায় একটি প্রচারমূলক ভিডিও “হিয়ার ইজ সিনচিয়াং” দেখানো হয়। এতে সিনচিয়াংয়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবাধিকার খাতে অর্জনকে তুলে ধরা হয়। সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির আইনবিষয়ক কমিটির পরিচালক লি চুয়ান এবং সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জননিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ইয়ালিকুন ইয়াকুফু সন্ত্রাসদমনের আইনি নীতি ও অনুশীলন সম্পর্কে বলেন। তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, সিনচিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বদা আইনের শাসনের নীতি মেনে চলা হয়, আইনের শাসনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এখানে মানবাধিকারকে সম্মান ও রক্ষা করা হয়। সিনচিয়াং কাশগার ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জুলিয়াতি সিমাই সিনচিয়াং-এ শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, সিনচিয়াং-এর সকল জাতিগোষ্ঠীর কর্মীরা স্বাধীনতা, সমতা ও নিরাপত্তার সাথে কাজ করে। সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তথাকথিত “জোরপূর্বক শ্রম আদায়ের” ঘটনা নেই।
সিনচিয়াং ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং উরুমচির ইয়াংজিং মসজিদের ইমাম, মুহাতিরেমু জিরিফু বলেন, সিনচিয়াংয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান ও নিশ্চিত করা হয়। কাশগড় শহরের ইয়াবেক্সি ভিলেজ কমিটির পরিচালক আয়গুলি মাইমাইতি কীভাবে চরম চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়ে বৃত্তিমূলক দক্ষতা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অধ্যয়ন করে সুখী জীবনযাপন করছেন—সে গল্প শোনান।
সেদিনের প্রেস ব্রিফিংয়ের পরিবেশ ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ। বৈঠকে যোগদানকারী উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা সন্ত্রাসদমন, উন্নয়ন, দারিদ্র্যনিরসন, মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে চীনের অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা সিনচিয়াং ইস্যুতে চীনের ন্যায্য অবস্থানকে সমর্থন করেন।
(ওয়াং হাইমান ঊর্মি, সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।)
মন্তব্য করুন