যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক’ মামলা দায়ের করায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর আইনজীবী আলিনা হাবাকে প্রায় ১০ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল আদালত ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের আরোপিত এই শাস্তিমূলক জরিমানা বহাল রেখেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এ খবর নিশ্চিত করেছে।
তিন সদস্যের বেঞ্চ গত বুধবার এই রায় দেন। আদালত জানায়, ট্রাম্প ও তাঁর আইনজীবী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনসহ আরও বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন, তা ছিল ‘ফ্রিভোলাস’—অর্থাৎ আইনি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রায়ে উল্লেখ করা হয়, শাস্তি আরোপে ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি।
এই রায় ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ে আরেকটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর কয়েক দিন আগে ১১তম সার্কিট আপিল আদালত তাঁর সিএনএনের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে অস্বীকৃতি জানায়—একই আদালতে এটি তাঁর টানা দ্বিতীয় পরাজয়।
এর আগে ২০২৩ সালে ফ্লোরিডার ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট মামলা খারিজ করে কঠোর সমালোচনা করে জানিয়েছিল, “এ মামলা কখনোই দাখিল করা উচিত ছিল না” এবং এটি করা হয়েছে “বাজে উদ্দেশ্যে”। সেই সময় আদালত ট্রাম্প, আলিনা হাবা এবং তাঁর আইন প্রতিষ্ঠানকে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ডলার জরিমানা করে।
আপিল বেঞ্চের ৩৬ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ মনোনীত প্রধান বিচারপতি উইলিয়াম প্রাইয়ার জুনিয়র। এতে যোগ দিয়েছেন ট্রাম্প মনোনীত বিচারপতি অ্যান্ড্রু ব্রাশার এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন মনোনীত বিচারপতি এম্ব্রি কিড। রায়ে ট্রাম্পের আইনগত যুক্তিগুলোকে “স্পষ্টতই দুর্বল” বলা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের আইনজীবী দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “তিনি বিষয়টি ন্যায্য ও সঠিক পরিণতি পর্যন্ত অনুসরণ করবেন।”
আলিনা হাবা ট্রাম্পের নির্বাচনের আগের সময়ের আইনজীবী ছিলেন। পরে ট্রাম্প তাঁকে নিউ জার্সির ভারপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে গত আগস্টে এক ফেডারেল বিচারক রায় দেন, হাবা বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়া ওই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাঁর অন্তর্বর্তী মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
২০২২ সালের মার্চে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট নেতৃবৃন্দ, সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কমি ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল—তারা ষড়যন্ত্র করে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগসাজশের “ভিত্তিহীন গল্প” তৈরি করেছিলেন। একই বছর সেপ্টেম্বরে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক ডোনাল্ড মিডলব্রুকস মামলাটি খারিজ করে বলেন, এটি ছিল “দুই শ’ পৃষ্ঠার রাজনৈতিক ইশতেহার”।
শাস্তিমূলক জরিমানা আদেশে বিচারক মন্তব্য করেছিলেন, “ট্রাম্প উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি ভিত্তিহীন মামলা ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর দীর্ঘদিনের আচরণের ধারাবাহিক অংশ।”
মন্তব্য করুন