‘হট ডগ’ শব্দটি প্রথম শুনে আমার মনে কেমন গিন গিন ভাব চলে আসে! এর আগে আমি জানতাম কোরিয়ানদের প্রিয় খাবার কুকুরের মাংস! এ ব্যাপারে আমাদের এলাকায় সেসময় একটা কথাও প্রচলিত ছিল! তখন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। রাস্তা নির্মাণের কন্ট্রাক্ট পেয়েছে কোরিয়ান একটি কোম্পানি। সড়কের কাজ শুরুর পর এলাকায় সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পথে পথে ঘুরতে থাকা বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে এবং এক মাসের মধ্যে তা প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে আসে। গুজব হোক আর সত্য হোক স্হানীয় সবাই জানলো হারিয়ে যাওয়া ওইসব কুকুর সড়কের কন্ট্রাক্ট পাওয়া কোরিয়ানদের পেটে গেছে(!) সবাই এরকম বলাবলি করছে। এলাকার তরুণ সমাজ রোজ রাতে কুকুর ধরা অভিযানে নামে এবং একটা-দুইটা করে ধরে ধরে কোরিয়ানদের কাছে বিক্রি করে। নাদুস-নুদুস কুকুর হলে একেকটির জন্য তিন-চার হাজার টাকাও পাওয়া যায়। তখন আমাদের এলাকার নটু কাক্কু তার গৃহপালিত পাঁচটি নাদুস-নুদুস কুকুর নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যান! এই কুকুরগুলোকে সারাদিন শিকল বেঁধে রাখলেও সন্ধ্যার পর ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাড়ির উঠোন ও চারদিকে রাতভর দৌড়ে ডিউটি দেয়!
তিনি ভাবেন ওসব মানুষরূপী লোভী সারমেয়রা যদি তার কুকুরদের ধরে নিয়ে বেচে দেয়!
আর সে চিন্তায় নটু কাক্কু রোজ রাতে বাড়ির উঠোনে ফ্লাস্ক ভর্তি চা নিয়ে বসে রাতভর কুকুর পাহারা দিতেন!
আমেরিকায় এসে আমি প্রথম দিকে আমার কর্মস্থলে এক লাঞ্চ পার্টিতে যোগ দিয়ে দেখি ওখানে ‘হটডগ’ সাজিয়ে রাখা হয়েছে!
আমি জীবনে এই প্রথম ‘হটডগ’ দেখলাম এবং তখনও সেই আগের মত গিন গিন করায় ওই লাঞ্চ পার্টিতে শুধু চিপস আর সফ্ট ড্রিংক্স নিয়ে সন্তোষ্ট থাকলাম!
এরপর অনেক অনুষ্ঠানে গেছি এবং প্রায় জায়গায় এই ‘হটডগ’! তখন দেখি আমাদের পরিচিত অনেকেই এই ‘হটডগ’ খেয়ে খেয়ে কেমন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে!
আমি অনেক ভেবে ভেবে লজ্জায় কাউকে কিছু না বলে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম-নিজের জন্ম মাটি ছেড়ে পৃথিবীর এত আধুনিক দেশে এসে এদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে শেষমেষ বুঝি কুকুরের মাংস খেয়ে খেয়ে উদরপূর্তি করতে হবে!!
মন্তব্য করুন