কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দেশে পালিত হচ্ছে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক। শোকের রং কালো হলেও ফেসবুকে লাল রঙের সয়লাব।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে অনেকেই তাদের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রোফাইল ফটো, প্রচ্ছদ ফটো শুধু লাল রং দিয়ে রেখেছেন। অনেককে চোখেমুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। সঙ্গে রয়েছে প্রতিবাদের নানান হ্যাশট্যাগ।
এর আগে, সোমবার (২৯ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এটিকে প্রহসন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে লাল রঙ বেছে নেন।
সোমবার রাত থেকেই ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নতুন এ ট্রেন্ডে যোগ দেন নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক বন্ধ রাখা হলেও মঙ্গলবার (৩০ জুন) টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে কালো প্রোফাইল পিকচার দিয়েছেন।
কী কারণে লাল রঙের প্রোফাইল পিকচার দিচ্ছেন জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, সরকার দেশব্যাপী গণহত্যা চালিয়ে তারপর ছাত্রদের আন্দোলনকে ‘সহিংসতা’ হিসেবে উল্লেখ করে নিহতদের স্মরণে শোক দিবস ঘোষণা করে নিহত শহীদদের সঙ্গে তামাশা করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা তাদের কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচিকে বয়কট করেছি। এখনো তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে। তাই আমাদের কর্মসূচি লাল কাপড়ে মুখ ও চোখে বেঁধে অনলাইন ক্যাম্পেইন করা।
এ বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী জানান, এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আমাদের অনেক ভাই জেলে। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আর এদিকে সরকার এসবের সমাধান না করে শোক জানাচ্ছে। ‘দিনে নাটক রাতে আটক’ এসব আর চলবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সমন্বয়কদের ডিবি পুলিশ আটকে রেখেছে। আমাদের ভাইদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আর এসবের মধ্যে যারা নির্যাতনকারী, তারাই আবার শোক জানাচ্ছে। ছাত্রের রক্ত নিয়ে এসব তামাশা চলবে না। শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে আমরা লাল প্রোফাইল পিকচার দিয়েছি। এই লাল মানে বিপ্লব, এই লাল মানে নতুনের জাগরণ।
মুশফিকুল আলম নামে এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা সেদিনই শোক করব যেদিন শিক্ষার্থী হত্যার বিচার হবে। হত্যাকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর রাষ্ট্র শোক করছে এটা প্রহসন ছাড়া কিছু না।
শিক্ষার্থীদের লাল প্রোফাইল পিকচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক পেশাজীবী মানুষও নিজেদের প্রোফাইল পিকচার লাল করেছেন। তাদের একজন জানান, পেশাগত কারণে আন্দোলনে যেতে পারিনি। কিন্তু ছাত্র হত্যার বিচার চাই। যেভাবে ছাত্র হত্যা করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে এটি নজিরবিহীন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় সোমবার পর্যন্ত ১৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে মন্ত্রিসভায় তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মন্তব্য করুন