“থ্রি সি” ভিসা বিধিনিষেধ নীতি গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করছে এমন যেকোন ব্যক্তির ওপর এই ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভিসা নীতি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা ভয়েস অফ আমেরিকার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বৃহস্পতিবার (সেপ্টেম্বর ২৮) একথা বলেন।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভিসা নীতি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিলেট নগরীতে স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সংস্থার ৫০তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এর প্রেক্ষিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা যে ব্যক্তি বা পরিবারের উপর আরোপ করা হবে, সেই পরিবারের সদস্য যদি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী হয় তাহলে তার জন্যও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে কিনা ভয়েস অফ আমেরিকার সেই প্রশ্নের জবাবে, শিলার “থ্রি সি”’র ব্যাখ্যা দেন এইভাবে, ““থ্রি সি” নামক ভিসা বিধিনিষেধ নীতি গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করছে এমন যেকোন ব্যক্তির ওপর এই ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হলো “যেকোন ব্যক্তি”। এমন ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে দুর্বল করে এমন কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনসাধারণকে সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখার জন্য সহিংসতার ব্যবহার এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা তাদের মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ।”
বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রথম পদক্ষেপ
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে আগ্রহীদের সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অঙ্গীকারের অংশ এটি।”
ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপের মধ্যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। মিলার বলেন, “বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র; যাতে এটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।”
মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, “নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ব্যক্তি ও তাদের নিকটতম স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।” তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া-কে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হলে, সেসব ব্যক্তি ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।”
মিলার জানান, “এর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের ঘোষণা: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের লক্ষ্যে ভিসা নীতির ঘোষণা দিতে গিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, “আজ, আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করা্র উদ্দেশ্যে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘৩সি’) ধারার অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মে মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে”।
তিনি আরো বলেছেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার, জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার থেকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে যেকোনো রকম ব্যবস্থার ব্যবহার”।
ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সকলের- ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যারা চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি”।
মন্তব্য করুন