বাংলাদেশ

মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন এন্ড চিলডেন অব বাংলাদেশ

পর্তুগালের লিসবনে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কক্সবাজারের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত “হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন এন্ড চিলডেন অব বাংলাদেশ” কে ২০২৩ সালের “Sultanate of Oman Excellence Award for Health Services During Crisis” ক্যাটাগরিতে গোল্ড উইনার ঘোষণা করা হয়েছে।

সারা বিশ্বের স্বনামধন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের উপস্থিতিতে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল ফেডারেশন’ এই অনুষ্ঠানেটি ২৬ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয়।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল ফেডারেশন’ প্রতিবছর এই ধরনের আয়োজন করে থাকে।

এই বছর, বিশ্বের ৪৩টি দেশ/অঞ্চল থেকে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলির থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০০টিরও বেশি হসপিটাল নির্বাচিত করেছিল, যা ২০১৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাওয়ার্ড শুরু হওয়ার পর থেকে এটি একটি রেকর্ড সংখ্যা ছিল।

পরবর্তীতে সাতটি ক্যাটাগরিতে ৬৯টি হসপিটাল ফাইনাল লিস্টে আসে, তন্মধ্যে হোপ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একমাত্র হসপিটাল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছে।

হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডাঃ ইফতিখার মাহমুদ গতরাতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের জমকালো অনুষ্ঠানে উক্ত ‘গোল্ড’ অ্যাওয়ার্ডটি গ্ৰহণ করেন।

উল্লেখ্য যে, কয়েক মাস পূর্বেই কক্সবাজারের এই হোপ ফাউন্ডেশনটি আমেরিকার স্বনামধন্য পুরস্কার ‘ক্লাসি অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত হয়েছিল।

কক্সবাজারের কৃতি সন্তান ডাঃ ইফতিখার মাহমুদ কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন এবং কক্সবাজারেই তার শৈশব শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করে শিশুর স্বাস্থ্যে উপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য আমেরিকায় যান।

সেখানে তিনি উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণ করে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সম্প্রতি আমেরিকার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কা ডাঃ ইফতিখার মাহমুদকে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করেছে। বর্তমানে ডাঃ ইফতিখার উদ্দিন মাহমুদ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করছেন।

ডাঃ ইফতিখার মাহমুদ বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের বিশেষকরে, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই ১৯৯৯ সালে ‘হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ’ নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই ফাউন্ডেশনটি হোপ হসপিটালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় মানসম্মত মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।

পুরস্কার হাতে হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডাঃ ইফতিখার মাহমুদ

প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সাল থেকে মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা’র চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাথে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলে হোপ ফাউন্ডেশন কাজ করছে। হোপ ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ৯০০ এর অধিক প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত মায়েদের কষ্ট লাঘব করতে পেরেছে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশন মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূল কার্যক্রম চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে বরিশাল বিভাগেও শুরু করেছে। হোপ হসপিটালের ফিস্টুলা সার্জনগন পর্যায়ক্রমে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হসপিটালে গিয়ে উক্ত ফিস্টুলা সার্জারি সম্পন্ন করে আসছে।

এছাড়াও হোপ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অনুমতিক্রমে ২০১২ সাল থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরীর প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। উক্ত হোপ মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ছয় ব্যাচে ২০০ এর অধিক মিডওয়াইফ ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেছে।

ডা: ইফতিখার মাহমুদ বলেন , ‘বৈশ্বিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে সন্মানিত করার সুযোগ পাওয়ার জন্য ওনি খুবই আনন্দিত।’

তিনি আরও বলেন এই অর্জন দেশের অর্জন, এটা সম্ভব হয়েছে হোপ ফাউন্ডেশন টিমের সকল সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ত্যাগের কারনে।

এজন্য তিনি হোপ টিমের সকল কর্মচারী, কর্মকর্তাসহ , ফাউন্ডেশনের ডাইরেকটর , এডভাইজার, স্বেচ্ছাসেবী ও অনুদানকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তিনি সবার সহযোগিতা ভবিষ্যতে ও অব্যাহত থাকবে এই আশা প্রকাশ করেন এবং সবার দোয়া কামনা করেন।

বাংলা সংবাদের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

Back to top button