ধর্মচিন্তাস্বাস্থ্য

কোথা থেকে আসে রমজানের খেজুর

রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রমজান মাসের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানহার, ধূমপান ও শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন।

এই মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সাওম পালন ফরয। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। এই মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকে। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

আর রমজান মাসে সূর্যাস্তের সময় বিশ্বজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা তাদের রোজা ভাঙেন ইফতারের মাধ্যমে; আর অধিকাংশ মুসলিম তাদের ইফতার শুরু করেন যে বাদামি রঙের সুমিষ্ট ফলটি দিয়ে— তার নাম খেজুর।

পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে খেজুরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই নয়, আধুনিক পুষ্টিতত্ত্বেও খাদ্যমান অনুযায়ী বিভিন্ন ফলের মধ্যে খেজুরের স্থান উচ্চ।

খেজুর উৎপাদনে শীর্ষে থাকা দেশগুলো

খাদ্য ও কৃষিসম্পর্কিত ডাটাবেস ট্রিজের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর উৎপাদিত হয় ৯০ লাখ টন খেজুর। যেসব ভৌগলিক অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ ও উষ্ণ, খেজুর চাষের জন্য সেসব অঞ্চল আদর্শ।

তবে খেজুর চাষ ও রপ্তানিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ৫টি দেশ— মিসর, সৌদি আরব, ইরান, আলজেরিয়া এবং ইরাক।

বিশ্বের শীর্ষ খেজুর রপ্তানিকারী দেশ মিসরে প্রতি বছর উৎপাদন হয় ১৭ লাখ টন খেজুর। যা বৈশ্বিকভাবে মোট উৎপাদিত খেজুরের ১৮ শতাংশ।

তার পরেই আছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ এই দেশটিতে প্রতিবছর উৎপাদিত খেজুরের পরিমাণ ১৫ লাখ টন, শতকরা হিসেবে ১৮ শতাংশ খেজুর উৎপাদিত হয়।

এছাড়া এ তালিকায় সৌদি আরবের পরেই অবস্থান করা ইরানে প্রতি বছর ১৩ লাখ টন, আলজেরিয়ায় ১২ লাখ টন এবং ইরাকে ৭৩ হাজার ৫০০ টন খেজুর উৎপাদিত হয়।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্বাদের, আকারের ও রঙের খেজুর পাওয়া যায়। তবে জনপ্রিয়তার বিচারে বৈশ্বিক বাজারে এগিয়ে আছে ৫ জাতের খেজুর।  এগুলো হলো—

মেজদুল : এই ধরনের খেজুরগুলো আকারে বড়, স্বাদে বেশ মিষ্টি এবং সুগন্ধী হয়। সাধারণত দু’ধরনের মেজদুল খেজুর পাওয়া যায় বাজারে— কিং মেজদুল এবং ব্ল্যাক মেজদুল।

মাবরুম: দৈর্ঘের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রসারিত এই খেজুরের রং হয় লালচে বাদামী। মাবরুম খেজুর আঁশসমৃদ্ধ এবং অন্যান্য জাতের খেজুরের তুলনায় এর স্বাদ খানিকটা কম মিষ্টি।

আজওয়া : বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেজুর আজওয়া। মদিনাসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হওয়াই এই জনপ্রিয়তার বড় কারণ। মাঝারি আকারের কালচে বাদামি রঙ্গের এই খেজুর বেশ নরম, মাংসল, রসালো এবং খুবই মিষ্টি হয়।

দেগলেত নূর : মাঝারি আকারের বাদামি রঙ এই খেজুরের মিষ্টতা খানিকটা কম। তবে মিষ্টি খাবার রান্না ও কেক-রুটি তৈরির জন্য এই খেজুর আদর্শ।

পিয়ারোম : প্রায় কালো রঙের পিয়ারোম অন্যান্য খেজুরের তুলনায় খানিকটা শুকনো এবং অনন্য স্বাদের জন্য বিখ্যাত।

খেজুর সম্পর্কিত কিছু মজাদার তথ্য

মানবসভ্যতায় খেজুরচাষের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। খেজুর গাছের মধ্যে নারী ও পুরুষ রয়েছে। কেবল নারী গাছেই খেজুর জন্মায়।একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার খেজুর পাওয়া যায়। এই পরিমাণ খেজুরের ওজন ১০০ কেজিরও বেশি। বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেজুর হলো আজওয়া।

সূত্র : আলজাজিরা

Back to top button