২১ অগাস্ট আন্তর্জাতিক বন্দর স্টেশন থেকে চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস (শিয়ান-হামবুর্গ) ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
এটি ছিল চলতি বছর চীন-ইউরোপ রেলপথে ১০ হাজারতম ট্রিপ, গত বছরের একই সময়কালের তুলনায় যা ৫ শতাংশ বেশি। এই ১০ হাজার ট্রিপে ট্রেনগুলো যেসব কন্টেইনার পরিবহন করেছে, সেগুলোর ৯৮.৪ শতাংশই ভারী কন্টেইনার।
চায়না-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেসের ৮২টি অপারেটিং রুট ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে। এই রেলওয়ের লাইন এখন ২৪টি ইউরোপীয় দেশের ২০০টি শহরে পৌঁছেছে।
চীন-ইউরোপ রেলপথের মালবাহী ট্রেনগুলো এখন বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন করছে। পণ্যের ধরন ক্রমশ বাড়ছে। এই রেলপথ আন্তর্জাতিক শিল্পে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও সরবরাহ-চেইনের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ যেন চীন-ইউরোপ পারস্পরিক সুবিধার সেতু। এই রেলপথ দুই পক্ষের জন্যই জয়-জয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
জার্মানির ডুইসবার্গে, এই রেলপথে আসা বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় পণ্য স্থানীয় পরিবহন ও গুদামজাতকরণ শিল্প; পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়ের ব্যবসা; লিজিং ব্যবসা ও পরিষেবা শিল্পকে চাঙ্গা করেছে।
ডুইসবার্গ পোর্ট গ্রুপের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে এর পণ্য বিক্রয় থেকে রাজস্ব আয় ১৮.৯ শতাংশ বেড়েছে এবং এর নিট মুনাফাও ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের সাথে এই শহরের ব্যবসার সম্পর্ক বিকশিত হচ্ছে। ডুইসবার্গ ও চীনের বিভিন্ন শহরের মধ্যে চলাচলকারী মালবাহী ট্রেনের সংখ্যা গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৭০-এ পৌঁছেছে, যা একটি নতুন রেকর্ডরে। ডুইসবার্গ পোর্ট গ্রুপের সিইও মার্কাস ব্যান বিশ্বাস করেন যে, চীন-ইউরোপ রেলপথে মালবাহী ট্রেনের আসা-যাওয়া ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।
ডুইসবার্গ সিটি গভর্নমেন্টের চায়না অ্যাফেয়ার্স কমিশনার মার্কাস টিউবার বলেছেন, ২০১৪ সালে মাত্র ৪০টি চীনা কোম্পানি ডুইসবার্গে ব্যবসা শুরু করেছিল। এখন সেখানে ১০০টিরও বেশি চীনা কোম্পানি ব্যবসা করছে। ডুইসবার্গ শহর আরও বেশি চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
চীন-ইউরোপ রেলপথের মালবাহী ট্রেনগুলো বেলারুশে স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত দুধের গুঁড়া, কাঠ, ফ্ল্যাক্স ফাইবার, স্টার্চ, পনির এবং আধা-সমাপ্ত মাংস চীনা বাজারে সরবরাহ করে আসছে। বেলারুশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন বিশ্লেষক অ্যাভডোনিন বলেছেন, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনা করলে, প্রচলিত পরিবহন-রুটে ভাড়া ও সরবরাহের নিশ্চিততার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, চীন-ইউরোপ রেলপথ বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখবে। পণ্যের দ্রুত ডেলিভারি এই রেলপথ বরাবর দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেলওয়ে কোম্পানির সহযোগী সংস্থা ফাভাদিসের চীন-ইউরোপ পণ্য উন্নয়ন বিভাগের মূল অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার ড্যাং শানশান সিনহুয়া নিউজ এজেন্সির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রথম “চংকিং-ডুইসবার্গ” রেলপথের উন্নয়নের পর থেকে চীন-ইউরোপ রেলপথের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আজ, চায়না রেলওয়ে এক্সপ্রেস শুধুমাত্র একটি সবুজ ও কম-কার্বন পরিবহনের মাধ্যম নয়, এটি আন্তর্জাতিক লজিস্টিক ক্ষেত্রের একটি অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। এটি ফরাসি কোম্পানিগুলির মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
ড্যাং শানশান বলেন, ২০২১ চীন-ফ্রান্স রেলপথ পরিবহন সহযোগিতায় উল্লেখযোগ্য অর্জনের একটি বছর এবং চীন-ইউরোপ রেলপথে মালবাহী ট্রেনের চলাচল ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে সরাসরি রাউন্ড-ট্রিপ রুট, বিশেষ করে চিয়ান-প্যারিস রাউন্ড-ট্রিপ ট্রেনের নিয়মিত অপারেশন অনেক ফরাসি উদ্যোক্তার পছন্দ হয়েছে। চীন ও ফ্রান্স বিশ্ব মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে ট্রেনের সুস্থ, স্থিতিশীল ও দক্ষ পরিচালনা নিশ্চিতভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা গভীরতর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চায়না রেলওয়ে এক্সপ্রেসের জন্য আরও ভালো সময় অপেক্ষা করছে।
(ওয়াং হাইমান ঊর্মি, সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং চীন।)
মন্তব্য করুন