শান্তির শহর মদিনা

মদিনা মুনাওয়ারা, রাসূল (স.) এর স্মৃতিধন্য শহর। যে শহরের প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাসূল (সা.) এবং তার সাহাবাদের স্মৃতিচিহ্ন। হিযরতের পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাসূল (সা.) এই শহরেই জীবন কাটিয়েছেন। মুসলমানদের প্রাথমিক উত্থান ও বিজয়ের সাক্ষী এই শহর। এই শহর থেকেই অর্ধ পৃথিবীকে শাসন করেছেন হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.). হযরত উসমান (রা.) এবং হযরত আলী (রা.)।
মদীনার বিভিন্ন স্থানের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ সেই উত্থান, বিজয় ও গৌরবের কথাই মাথা উঁচু করে প্রকাশ করছে। এমনই একটি স্থাপনা ‘সাত মসজিদ’।

মদীনার উত্তরে সাল’আ পাহাড়ের পাদদেশে এই সাত মসজিদে’র অবস্থান। ৫ম হিজরী সালে খন্দকের যুদ্ধের সময় এই স্থানেই খন্দক খনন করে মদীনার মুসলমানরা মক্কার কুরাইশদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত আরব মুশরিক বাহিনীর আক্রমণকে প্রতিহত করেছিল। সম্মিলিত মুশরিক বাহিনীকে প্রতিহত করার সেই গৌরবময় স্মৃতিকেই ধারন করে আছে এই স্থাপনা।
স্থাপনাটি কোন একক স্থাপনা নয়, বরং ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ নিয়েই এই স্থাপনার অবস্থান। মোট ছয়টি মসজিদের অবস্থান স্বত্ত্বেও সমগ্র স্থাপনাটি ‘সাত মসজিদ’ নামে পরিচিত। ছোট ছোট এই মসজিদগুলোর সাথে এই স্থান থেকে অল্প কিছু দূরে অবস্থিত মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কেবলার মসজিদকে একত্রে অর্ন্তভুক্ত করে এদেরকে একত্রে সাত মসজিদ হিসেবে ডাকা হয়।

দ্বিতীয় উমর হিসেবে পরিচিত উমাইয়া খলীফা হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয (রহ.) মদীনার গর্ভনর থাকাকালে ৮৭ হিজরী থেকে ৯৩ হিজরীর মধ্যে (৭০৫-৭১১ ঈসায়ী) এই মসজিদগুলো প্রথম নির্মান করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদগুলোর সংস্কার করা হয়। ওসমানী শাসনামলে ওসমানী সুলতান ও খলীফা প্রথম আবদুল মজীদ ঈসায়ী ১৮৫১ সালের দিকে মসজিদগুলোর পূর্ণনির্মাণ করেন।

মসজিদ আল-ফাতহ
সাল’আ পাহাড়ের পশ্চিমে অবস্থিত পাহাড়ের উপর স্থাপিত এই মসজিদটিই অপর মসজিদগুলোর তুলনায় বড়। মসজিদটির নাম আল-ফাতহ হওয়ার কারন হিসেবে বলা হয়, এই স্থানে দাঁড়িয়েই আল্লাহর রাসূল (সা.) নামাজ আদায় ও যুদ্ধে জয়ের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। যার ফলে মুসলমানরা বিজয় (ফাতহ) অর্জন করে।
মসজিদ সালমান আল-ফারেসি
মসজিদ আল-ফাতহের দক্ষিনে পাহাড়ের নিচে পাহাড় থেকে বিশ মিটার দূরত্বে এই মসজিদটির অবস্থান। রাসূল (সা.) এর ইরানি সাহাবী হযরত সালমান আল-ফারেসি (রা.) এর নামানুসারে এই মসজিদটির নামকরন করা হয়। মূলত তার পরামর্শেই সম্মিলিত আরব মুশরিক বাহিনীর আক্রমন থেকে মদীনাকে রক্ষা করার জন্য রাসূল (সা.) খন্দক খননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

মসজিদ আবু বকর সিদ্দিক

মসজিদ সালমান আল-ফারেসির দক্ষিন-পশ্চিমে পনেরো মিটার দূরে এই মসজিদটি অবস্থিত। হযরত আবু বকর (রা.) খলীফার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতেন বলে বর্ণনা এসেছে। তার নামেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।
মসজিদ উমর ইবনুল খাত্তাব
মসজিদ আবু বকর সিদ্দিক থেকে দশ মিটার দক্ষিনে এই মসজিদটির অবস্থান। এর ঐতিহাসিকতা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়না। তবে ধারনা করা, হযরত উমর ফারুক (রা.) এর খেলাফতকালীন সময়ে তিনি এই স্থানে নামাজ আদায় করেছেন বলে তার নামে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।
মসজিদ আলী ইবনে আবী তালিব
মসজিদ উমর ইবনুল খাত্তাবের দক্ষিনে আয়তাকার এক পাহাড়ের উপর এই মসজিদটির অবস্থান। খন্দকের যুদ্ধের সময় হযরত আলী (রা.) এখানে অবস্থান করেছিলেন বলে এই মসজিদ তার নামে নামকরনকৃত করা হয়েছে।
মসজিদ ফাতেমা আয-যাহরা
সাত মসজিদ স্থাপনার মসজিদগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম মসজিদ এটি। মসজিদ আলী ইবনে আবী তালিবের পশ্চিমে পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এই মসজিদটি মসজিদ সাদ ইবনে মুয়ায নামেও পরিচিত।

কানিজ ফাতিমা : উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা: ট্রিপজিপ, প্রবাসী।


Posted

in

by

Tags: