বাংলাদেশ; সকল বাধার প্রাচীর ভেঙে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে

বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না বিষয়টি সহজেই অনুমেয় নতুবা সারা বিশ্বের অনেক বিভৎস অঘটনেও কেনো নেই, কারো এমন কোনো সাড়া শব্দ! সামান্য উত্তম মধ্যম খাওয়া ছটুল সেলিব্রিটির জন্য জাতিসংঘ পর্যন্ত এগিয়ে আসে এখানে আর মানুষ মরলে কিছুই বলতে হয় না! ৭১ রে আঁটকাতে না পারার জ্বালা-যন্ত্রণাও হয়তোবা মানসিকভাবে অনেককে তাড়িত করছে যার প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশও হয়তো এমনটি। আমরাও আজ এমনটি অনুমান করতে বাধ্য হচ্ছি। কথায় বলে, গরীবের শত্রু নেই ভাঙ্গা ভেড়ার ঘরে কিংবা ফুটপাতে পড়ে থাকলেও কেউ চেয়ে দেখে না, কিন্তু ধন-দৌলত স্টীলের লকারেও থাকলে দেইখা পালায়। আমাদেরও অবস্থা হয়তোবা এখন অনেকটা সেরকমই। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশে যখন ধারাবাহিক শাসন-আসন ছিল না কিংবা মাথাপিছু কোন আয় উপার্জনও তেমন ছিল না। ছিল শুধু, তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা। উত্থান-পতনের অনাকাঙ্ক্ষিত সব হঠকারিতায় যখন দেশ চলছিলো তখন আমাদেরকে কেউ আর এমন কোনো গণতান্ত্রিক ও মানবিক নসিহত যে করতেন না।

রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশে যখন ধারাবাহিক শাসন-আসন ছিল না কিংবা মাথাপিছু কোন আয় উপার্জনও তেমন ছিল না। ছিল শুধু, তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা। উত্থান-পতনের অনাকাঙ্ক্ষিত সব হঠকারিতায় যখন দেশ চলছিলো তখন আমাদেরকে কেউ আর এমন কোনো গণতান্ত্রিক ও মানবিক নসিহত যে করতেন না।

আজ বিগত ১৫ বছরের একটানা শাসনামলে অসংখ্য মেগা প্রকল্প ও সামাজিক পরিষেবা সহ মাথাপিছু আয় যখন (২০০৯ থেকে ২০২৩) ১৫ বছরে ৫ গুণ বেড়ে বিগত দিনের মাত্র ৬৮৬ ডলার থেকে ২ হাজার ৭ শত ৯৩ ডলারে পৌঁছে, মাথাপিছু আয়ে যখন আমরা বার বার ভারতকেও ছাড়িয়ে যাই এবং দেশ যখন নানা উদ্দীপনায় পুলকিত, আর তখনই সভ্যসুলভ মানবাধিকারীদের চোখ খুলে গেলো! যখন সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের গায়ে কাপড় ছিল না, পেটে ভাত ছিল না, তখন নিজের কেনা খাদ্যের জাহাজ বন্দরে পৌঁছতে দেয়া হয়নি। পায়ে স্যান্ডেল ছিল না, শীতের কাঁথা কম্বল কিছুই ছিল না, শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন, বিদ্যুৎ ছিল না, যখন একের পর এক সামরিক নির্ভর সরকার চেপে বসতো, যখন বছরের পর বছর আমরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতাম, যখন নিরাপত্তা শৃঙ্খলা বলে কিছু ছিল না, যখন গায়ের জোরে সব চালিয়ে নেওয়া যেতো, যখন হবুচন্দ্রের শাসন চলছিলো, যখন মাত্র একজন প্রার্থী একাই জাতীয় নির্বাচন খেলতেন তখন তো কারো গণতান্ত্রিক কোনো হাক-ডাক কিংবা হুয়াক্কা হুয়া আমরা শুনতে পাইনি।

যখন ১৬ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছিল মাত্র ৬ ডলার কিংবা যখন মাথাপিছু আয় উল্টো হাঁটছিল, যখন দরিদ্রতমদের একটি স্বল্প আয়ের দেশ আমরা ছিলাম তখন কারো মানবাধিকার কিংবা গণতন্ত্রের মায়াকান্নাটুকুও যে ছিল না!
৭২ এ মাথাপিছু ৯৩ ডলার আয় দিয়ে শুরু হয় যে যাত্রা, তা ৭৫ পর্যন্ত ৩ গুণে পরিণত হয়ে ২৭৭ ডলারে উন্নীত হয়েছিল এবং যা পরবর্তী ৭৫ থেকে ১৯৯১ এ দীর্ঘ ১৬ বছরে মাত্র ৬ ডলার বৃদ্ধি পায়, আর তখনও আমরা দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের দেশ ছিলাম। এমনই সব হাজার অক্ষমতার সময় তারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কেমন কথা বলতেন!

যখন জাতীয় বাজেটের জন্য তলপিতলপা সহ আমরা কনসর্টিয়ামের বৈঠকে হাজির হয়ে দুহাত জোড় করে অনুদান প্রার্থনা করতাম, যখন আমাদেরকে কেউ মিসকিন, কেউ খয়রাতী বলে ঠাট্টা মসকারা করতো, যখন সাইক্লোন জলোচ্ছ্বাসে লাখ লাখ মানুষ মরে ভেসে যেতো, যখন আমাদের যাতায়াতের রাস্তা ব্রিজ কালভার্ট ছিল না, যখন আমাদের মানুষজন অহরহ রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতো, যখন একমুঠো ভাতের জন্য দুয়ারে দুয়ারে মানুষ ঘুরতো, যখন আমাদেরকে ভিক্ষুকের আসনে বসানো হতো, মঙ্গা ইত্যাদি হাজারো অভাব অনটনের অবজ্ঞায় অভিশপ্ত যুগ বছর যখন আমরা পার করছিলাম তখনতো কারো এত দরদ উতলে পড়তে আমরা দেখিনি!

আজ যখন আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে মিরাক্যাল গতিতে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেছি, যখন আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সক্ষমতা ও কূটনীতিতে দক্ষতার সাথে বিশ্ব দরবারে সহায়ক ভূমিকা রাখছি, যখন ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিচ্ছি, যখন লাখ লাখ গৃহ ও ভূমিহীন মানুষকে আশ্রায়নের ঘর দেওয়া হচ্ছে, সামাজিক পরিষেবা-ভাতা ও ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যখন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের উন্নতি সাধনসহ ইত্যাদি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এগিয়ে চলা শুরু করেছি মডেল রাষ্ট্রের টাইটেল নিয়ে, তখন তারা বাধ সাধছেন তথাকথিত মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের খণ্ডিত হাতিয়ার উঁচিয়ে! থাকতে পারে রাজনৈতিক সংকট ও টানাপোড়েন, থাকতে পারে দ্বিমত তিমত অভাব- অনটন, বৈষম্য, বঞ্চনা- বিড়ম্বনা, ক্ষমতায় আরোহণের লড়াই ইত্যাদি, সবই সময়ের আঙ্গিকে রাজনৈতিকভাবে আমাদেরকেই সমোঝোতা ও সমাধান করতে হবে জাতীয় ব্যক্তিত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে, কেননা দেশ ও জাতি একটি স্থায়ী বসত ও প্রতিষ্ঠান কিন্তু উন্নয়ন ও মর্যাদা অস্থায়ী ও আপেক্ষিক।

মো. জহির উদ্দিন, অধ্যক্ষ, শাহ নিমাত্রা এস.এফ. ডিগ্রি কলেজ।


Posted

in

by

Tags: