শবে বরাতের রোজার মর্যাদা
প্রতি আরবি মাসের ১৩-১৫ তারিখ তিন দিন আইয়ামে বিজের রোজা রাখা সুন্নাত। বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরও এ রোজা রাখতে বলেছেন। সে হিসেবে (১৪৪৪ হিজরি) চলতি শাবান মাসে আইয়ামে বিজের রোজা রাখার দিন হলো ৬-৭ ও ৮ মার্চ ২০২৩ইং।
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের জন্য প্রত্যেক আরবি মাসের মধ্যভাগে তিনদিন রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। সে হিসেবে এ (শাবান) মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ হলো ৬-৭ ও ৮ মার্চ। যারা এ তিনদিন রোজা রাখবেন; তাদের ৫ মার্চ দিবাগত রাতে সেহরি খেতে হবে।
আইয়ামে বিজের রোজার রাখার নির্দেশ, বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা আইয়ামে বিজের রোজা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হযরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখল; সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ এর সমর্থনে আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে নাজিল করেন- ‘যে একটি নেকি নিয়ে আসে তার জন্য রয়েছে তার ১০ গুণ।’ অতএব একদিন ১০ দিনের সমান।’ (তিরমিজি)
হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ)
হযরত ইবনু মিলহান আল-ক্বাইসি তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আইয়ামে বিজের রোজার ব্যাপারে নসিহত করেছেন; আমরা যেন তা (মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ পালন করি। তিনি আরো বলেছেন, এটা সারাবছর রোজা রাখার মতোই।’ (আবু দাউদ)
এ ছাড়াও আইয়ামে বিজের রোজা সম্পর্কে বর্ণিত আছে-
হযরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম বেহেশতের নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পর তাদের শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক চলে যায়। আর তাদের শরীরের রংও কুৎসিত হয়ে যায়। এরপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে চন্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোজা রাখলে আবার তাদের শরীরের রং উজ্জ্বল হয়ে যায়। তাই এই তিন দিনকে আইয়্যামে বিজ বা উজ্জ্বলতার দিন বলা হয়।
আইয়ামে বিজের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা পালন, সারাবছর রোজা পালনের সমান।’
শবে বরাতে রোজা-
অনেকেই ভাবেন, শবে বরাতের রোজা মোট তিনটি- ১৪, ১৫ ও ১৬ শাবান। এটা ঠিক নয়। হাদিসে রয়েছে- এই রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৮)
সুতরাং রোজা কেবল একটি এবং তিনটি বিশুদ্ধ হাদিসে প্রমাণিত নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত হলো, শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজান মাস ব্যতীত পূর্ণ কোনো মাস নবীজিকে (সা.) আমি রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবানের তুলনায় ভিন্ন কোনো মাসে এত রোজা পালন করতেও দেখিনি। (বুখারি, হাদিস ১৯৬৯)।
তাই শেষের দুই দিন ছাড়া শাবানের মাসজুড়ে রোজা রাখা মুস্তাহাব। তা ছাড়া প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখাও প্রমাণিত। সেভাবে তিনদিন রাখলে সমস্যা নেই। (ইসলাহি খুতবাত, মাওলানা তাকি উসমানি)।
‘কেন শাবান মাসে নবীজি (সা.) অধিক রোজা রাখতেন’- এই প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার কারণে মানুষ এ মাসের ব্যপারে উদাসীন থাকে। অথচ এটা এমন মাস, যে মাসে রবের নিকট আমল তুলে ধরা হয়। আমি চাই যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল তার নিকট পেশ করা হোক। (ফাতহুল বারি (৪/২৫৩); নাসায়ি, হাদিস ২৩৫৭)
তবে যারা আইয়ামে বিজের রোজা পালন করেন অর্থাৎ প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখেন, তাদের রোজা রাখতে বাধা নেই। শবে বরাত এ তিনদিনের মধ্য দিন। আর এ তিনদিন রোজা পালন করা সুন্নাত।