ধর্মচিন্তা

রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকারে ইসলামের বিধান

রমজান আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের মাস। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এই মাসকে টাকার পাহাড় গড়ার সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে। অথচ এটি ঘৃণ্য ও জঘন্যতম গুনাহের কাজ।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো এবং মজুদ নিয়ে ইসলাম যা বলেছে-

আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)। নবি কারিম (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত।’ (তিরমিজি: ১২১০)

ইসলামি শরিয়তে মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান কারণগুলো হলো—

মজুতদারি : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ মজুতদারি। বাজারে পণ্য সংকট থাকার পরও ব্যক্তি মুনাফার জন্য পণ্য গুদামজাত করে রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষত তা যদি খাদ্যশস্য হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানের খাদ্যশস্য মজুত রাখে, আল্লাহ তার ওপর দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৫৫)

বাজার সিন্ডিকেট : বাজার দর নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। ইসলামের নির্দেশনা হলো- পণ্য উৎপাদনের পর তা স্বাধীনভাবে বাজারে প্রবেশ করবে। বাজার মূল্য বৃদ্ধির জন্য তা আটকে রাখবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার রাখে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২০৩৯৬)

কালোবাজারি : কালোবাজারির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হয়। কালোবাজারি সরাসরি প্রতারণা, জুলুম ও আর্থিক অসততার শামিল। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেরা নিজেদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)

মধ্যস্বত্বভোগী : মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে না। ইসলাম পণ্য উৎপাদনের পর তা বাজারজাতকরণ পর্যন্ত মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছে। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের কাছ থেকে খাদ্য ক্রয় করতাম। নবি করিম (সা.) খাদ্যের বাজারে পৌঁছানোর আগে আমাদের তা ক্রয় করতে নিষেধ করলেন।’ (সহিহ বুখারি: ২১৬৬)

কৃষির প্রতি অমনোযোগ : কৃষিকাজে অমনোযোগের কারণে খাদ্যপণ্যের সংকট তৈরি হয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে। ইসলাম কৃষি ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জমিনের পরতে পরতে জীবিকা অন্বেষণ করো।’ (মাজমাউল জাওয়ায়েদ)

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে মুমিনরা নানাভাবে তা প্রতিহত করতে পারে। যেমন—

মূল্য নির্ধারণ : দ্রব্যমূল্য বেশি বৃদ্ধি পেলে রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থাস্বরূপ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ ছাড়া যদি মানুষের কল্যাণ পরিপূর্ণতা লাভ না করে, তাহলে শাসক তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গত মূল্য নির্ধারণ করবেন। কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কারো প্রতি অন্যায় করা যাবে না। আর মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই যদি তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় এবং কল্যাণ সাধিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান মূল্য নির্ধারণ করবেন না।’ (কিতাবুল মাজমু: ১২/১২১)

বর্ধিত মূল্যের পণ্য বর্জন : ব্যবসায়ীদের অন্যায় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাজ বর্ধিত মূল্যের পণ্য বর্জন করতে পারে। কেননা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে গোশতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে লোকেরা তার কাছে অভিযোগ করে তার মূল্য নির্ধারণের দাবি জানায়। তিনি বলেন, তোমরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও। তাদের কাছ থেকে গোশত কেনা ছেড়ে দাও। (আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া: ৯/১৪১)

ক্রয়-বিক্রয়ে সহজতা : ব্যবসায়ীদের উচিত এমন কঠিন সময়ে ক্রয়-বিক্রয়ে সহজতা অবলম্বন করা। মহানবি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ এমন একজন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে ক্রেতা, বিক্রেতা, বিচারক ও বিচারপ্রার্থী অবস্থায় সহজতা অবলম্বনকারী ছিল। (সুনানে নাসায়ি: ৪৬৯৬)

Back to top button