ধর্মচিন্তা

মীলাদুন্নবী (সা.) আল্লাহর রহমতে সিক্ত হওয়ার দিন

ধুলির ধরায় রহমতের ভান্ডার নিয়ে এসেছেন প্রিয় নবি। বিশ্বব্যাপী তাঁরই জন্মদিন উপলক্ষ্যে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠছে মুমিন মুসলমান। মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর রহমতে সিক্ত হওয়ার দিন আজ। কিন্তু কীভাবে? কোন উপায়ে রহমত পেয়ে ধন্য হবে মুমিন? কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবির প্রতি দুরুদ ও সালাম তথা রহমত বর্ষণের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন এভাবে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির ওপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতারাও তাঁর জন্য রহমত কামনা করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দুরুদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ এ আয়াতের উপর আমল করেই দুরুদ ও সালাম পাঠের মাধ্যমে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবীর আজকের দিনে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত পেয়ে ধন্য হওয়ার সর্বোত্তম দিন আজ। ঈমানদার মুমিন মুসলমান আজ প্রিয় নবির প্রতি সালাম জানাবে এভাবে- ‘আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি সালাত ও সালাম ।’ আল্লাহ তাআলা নিজেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করেন ফেরেশতারাও রহমতের দোয়া করেন আর এ নির্দেশ ঈমানদার মানুষের প্রতিও।
অফুরন্ত রহমতে যেভাবে সিক্ত হবে মুমিন: ঈদে মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত বেলাদাত, নবুয়ত, হিজরত ও ওফাত উপলক্ষ্যে তাঁর স্মরণ ও তাঁর প্রতি বেশি বেশি দুরুদ ও সালামে মিলবে অফুরন্ত রহমত । কেননা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দুরুদ ও সালাম প্রেরণেই রয়েছে ক্ষমা ও রহমত প্রাপ্তি ঘোষণা । হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত। তাহলো-
১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দুরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন। (মুসলিম, তিরমিজি)
২. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত বর্ষণ করবেন। তার ১০টি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তার জন্য রহমতের ১০ দরজা খুলে দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)
৩. হযরত আমের ইবনে রবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (খুতবা দেয়ার সময়) বলতে শুনেছি, ‘আমার ওপর দুরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দুরুদ পড়তে থাকবে, ফেরেশতারা তার জন্য ততক্ষণ দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা যে, সে দুরুদ বেশি পড়বে না কম পড়বে।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)
৪. হযরত রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ দুরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’ (তাবারানি, ইবনে বাযযার)
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে কাছাকাছি হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দুরুদ পড়েছে।’ (তিরমিজি)
৬. হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার আল্লাহর জিকিরের খুব তাগিদ দিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করে থাকি । আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো । আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা । তবে বেশি করলে আরো ভালো, আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয় । তবে বেশি করলে আরও ভালো । আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দুরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার উদ্দেশ্য হাসিল হবে। তোমার গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (তিরমিজি, তাবারানি)
মুমিনের দুরুদ ও সালাম শুনেন প্রিয় নবি: মুমিন মুসলমানের পড়া দুরুদ ও সালাম প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌছানো হয়। দুরুদ পৌছানোর দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন, এ ফেরেশতা মদিনায় প্রিয় নবির রওজায় দুরুদ পাঠকারীর পরিচয়ও পেশ করেন। হাদিসে এসেছে- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার জমিনে বিচরণকারী (এমন) কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে পাঠানো সালাম পৌছে দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)
মনে রাখতে হবে দুরুদ বিহীন কোনো দোয়াই আল্লাহর কাছে পৌছে না বরং তা আসমান এবং জমিনের মাঝে ঝুলে থাকে, যা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। হাদিসে এসেছে- হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যে পর্যন্ত না তুমি তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরুদ না পড়বে ততক্ষণ এ দোয়া আসমানে যাবে না বরং তা আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলে থাকবে।’ (তিরমিজি) প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতার জন্য রহমত ও অনুপম আদর্শ।
তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করতে কুরআনে পাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁর প্রতি দুরুদ পাঠেই যদি এত বেশি ফজিলত লাভ করা যায়। তবে তার হুকুম আহকাম কিংবা দিকনির্দেশনা পালন করলে মুমিনের মর্যাদা কতবেশি হবে তা অনুমেয়। সুতরাং রবিউল আউয়াল হোক মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ গ্রহণের মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ গ্রহণে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনাই হোক মুমিন মুসলমানের দীপ্ত প্রত্যয়। আদর্শ গ্রহণের যে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা- ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (চরিত্রের) মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সুরা আহযাব: আয়াত ২১) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবির সর্বোত্তম আদর্শ গ্রহণে ঈদে মীলাদুন্নবীর আজকের দিনে বেশি বেশি দুরূদ পাঠের মাধ্যমে উল্লেখিত ফজিলত ও অফুরন্ত রহমত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Back to top button