গুড’ ফ্রাইডে
যীশু খ্রিস্ট মৃত্যুবরণ করেন শুক্রবারে। সেই দিনটিকে বলা হলো ‘গুড ফ্রাইডে’ বা ‘পুণ্য শুক্রবার’। গুড ফ্রাইডে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। গুড ফ্রাইডে শব্দটি আভিধানিক অর্থে ভালো দিন বোঝায়। এর বেশি বলতে গেলে, শুভদিন অথবা মঙ্গলময় বা আশীর্বাদিত দিন। আধ্যাত্মিক গভীরতার দিক থেকে দিনটিকে আমরা বলে থাকি ‘পুণ্য শুক্রবার’। পুণ্য কথাটার অর্থ হলো পুত, পবিত্র, নিষ্পাপ, শুচিশুদ্ধ।
এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং যীশু খ্রিস্টকে অকথ্য নির্যাতন করে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে হত্যা করা হয়। তাই দিনটি হলো যীশুর মৃত্যুদিবস।
খ্রিস্টানদের জন্য এই দিনটি আসলে শোক দিবস, শহীদ দিবস। কারণ, যীশু খ্রিস্ট আমাদের পাপের মূল্য দিতে গিয়ে তাঁর দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দান করে নিজেকে নিঃশেষে বিলিয়ে দিয়ে পাপের দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, এমন পুতপবিত্র এই পুণ্যজনের মৃত্যু হয়েছিল একজন জঘন্য পাপির ন্যায়। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন নিষ্পাপ একজন ধর্মগুরু, মসীহ, অর্থাৎ অভিষিক্ত মুক্তিদাতা।
তাঁর শিক্ষা ও কর্মকা- ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। তিনি ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। তাই মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন। তিনি শত্রুকে ঘৃণা না করে বরং ক্ষমা করে বুকে টেনে নিতে শিখিয়েছেন।
তিনি অসহায় দীন-দরিদ্র মানুষের ওপর কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি না করে তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে বলেছেন। তিনি ছিলেন মানব দরদী। তাই তিনি অন্ধের চোখ খুলে দিয়েছেন, খোঁড়াকে হাঁটার শক্তি দিয়েছেন, এমনকি মৃতকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আজকের অশান্ত পৃথিবীতে খ্রিস্টের ক্ষমার এই অমোঘ বাণীর বড়ই প্রয়োজন। যেখানে ক্ষমা, সেখানেই মিলন ও ভ্রাতৃত্ব; সেখানেই যুদ্ধের অবসান, সেখানেই উন্নয়ন। যীশুর যাতনা ও মৃত্যুর দিনে, এই শোকাচ্ছন্ন দিনটিকে আমরা ব্যাড ফ্রাইডে না বলে গুড ফ্রাইডে বলি এই জন্য যে, আমরা পাপে ডুবে অন্ধকারে পথ চলছিলাম, তিনি তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের আলোর পথের সন্ধান দিলেন। সারা বিশ্বের খ্রিস্টানদের জন্য এই দিনটি সত্যিই গুড ফ্রাইডে বা পুণ্য শুক্রবার।