ধর্মচিন্তা

ওমরাহর সময় রমজান মাসের আমল

ওমরাহর সময় রমজান মাসে অনেক আমল রয়েছে । আর এই সময়ের আমল সয়াবের পরিমাপ বেড়ে যায়। রমজান মাসে একটি ওমরাহ করলে একটি হজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বরাতে একটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ করা আমার সঙ্গে হজ আদায় করার সমতুল্য। (বুখারি: ১৮৬৩)

সময়মতো নামাজ

সিয়াম পালনের সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো নামাজ আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববীতে অবস্থান করে বিশাল জামাতে সময়মতো নামাজ পড়তে পারবেন। কোরআনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মোমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য (সুরা নিসা: ১০৩)

রোজা রাখা

রমজান মাসে রোজা বা সিয়াম পালন করা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেছেন, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, যারা এই মাসটিতে পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)

সিয়াম পালনের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি: ২০১৪)

কোরআন পাঠ ও অন্যকে শেখানো

আল কোরআনে আছে, রমজান মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। তাই এ মাসের অন্যতম আমল সঠিকভাবে কোরআন শেখা। কোরআন শিক্ষা করা ফরজ। কেননা কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন (সুরা আলাক: ১)।’

রমজান মাস অপরকে কোরআন শেখানোর উত্তম সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় (বুখারি: ৫০২৭)।

ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থান করে কোরআন তিলাওয়াত করা, শুদ্ধ ভাবে শেখা, অপরকে শেখানো যায়।

তওবা ও ইস্তিগফার

তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ফিরে আসা’। এর অন্তর্নিহিত অর্থ গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। তওবা করলে আল্লাহ খুশি হন।

আল-কোরআনে আছে, ‘হে মোমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, বিশুদ্ধ তওবা; তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা আত-তাহরীম: ৮)

তাকওয়া অর্জন

তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কোরআনে আছে, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।’ (সুরা আল বাকারা: ১৮৩)

এসব ফজিলত লাভের জন্য আমাদের সচেষ্ট হওয়ার সুযোগ আছে। যার ওপর ফরজ হয়েছে তিনি কালবিলম্ব না করে রমজানে ওমরাহ এবং হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারেন।

আরও কিছু আমল

তারাবির নামাজ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। মক্কার মসজিদুল হারামে বা মসজিদে নববিতে ইমামের সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শুনবেন ও তারাবির নামাজ আদায় করবেন, অন্য রকম অনুভূতি হবে।

আল্লাহ বলেছেন, ‘স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে বাড়িয়ে দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা ইবরাহীম: ৭)। রমজান মাসে আল্লাহর বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করার আমল করা যায়।

এমনিতেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব ও মর্যাদা রয়েছে। রমজানের এর ফজিলত আরও বেশি। এ সময় সাহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয় বলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সুযোগও বেশি।

এ মাসে গরিব–মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীলতার সঙ্গে দান–খয়রাত করা ভালো। হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম।

 

Back to top button