আলোর পথে উদীয়মান সূর্য “ছায়াতল বাংলাদেশ”

ছায়াতল বাংলাদেশ -এখানে পথশিশুদের অক্ষর জ্ঞানও নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর এক উদীয়মান সূর্য এই সংগঠন।

যাদের নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি ওদের বয়স আনুমানিক ৫ থেকে ১৪ বছর। তারা স্বপ্ন দেখে জীবনে বড় হওয়ার। কিন্তু ভাগ্যের কারণে এই বয়সেই ওদের পরিবারের জন্যে রোজগার করতে হয়।

এমনকি যারা জ্ঞানগরিমায় বড় হয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার দায়িত্ব নেবে তাদের অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা পাচ্ছে না তাদের মৌলিক অধিকার।

এমন সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের লেখাপড়া শিখতে আগ্রহের কমতি নেই । তাই তারা সময় বের করে আসে বিনামূল্যের বিদ্যালয়ে। ওদের বিদ্যালয়ের নাম ‘ছায়াতল বাংলাদেশ’। ছায়াতল বাংলাদেশ একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ।

এই সংগঠনটি সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের বিনামূলে বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে থাকে। প্রতি মাসে বিনামূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করে, সেখানে শিশু ও তার পরিবারকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। এর বাইরে উৎসবে শিশুদের পোশাক বিতরণ এবং বিনোদনের জন্যে -গান, নাচ ও খেলাধুলার আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এই গল্পের মহানায়ক সোহেল রানা। তিনি তখন ঢাকা কলেজে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে এক বিকেলে বসেছিলেন শ্যামলী পার্ক মাঠে। রাকিব নামের এক শিশু দৌড়ে এসে বললো ‘মামা কিছু খাইতে দেন’। সোহেল রানা বললো দিতে পারি যদি তোমরা পড়ালেখা করো। তোমরা তোমাদের নাম লিখতে পারো? ওই মুহূর্তে সোহেল রানার সঙ্গে থাকা একটা নোটবুক ছিল, কলম ছিল, তা দিয়ে ওদের নাম লিখে দেখালেন। অনেক ভুলভাল লিখলেও শিখতে তাদের খুব আগ্রহ ছিল। আর এই আগ্রই সোহেলকে অনুপ্রাণিত করে।

এমনকি পরদিনও এসে নাম লেখার আগ্রহ প্রকাশ করে পথশিশু। পরের দিন ওরা ঠিকই আসলো এবং আরো ক’জন শিশুকে সঙ্গে আনলো। এভাবেই একজন দুজন করে জুটে যায় বেশ বড় এক শিশুর দল।ঐ সময় কিছু মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী যৌথ ভাবে একটি সংগঠনের প্রস্থাব দেয় । আর সেই থেকে শুরু হলো ‘ছায়াতল বাংলাদেশ।’ এইভাবে শুরু হলো সংগঠন।

বর্তমানে এই সংগঠন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্যে গড়ে তুলেছে চারটি স্কুল। ছায়াতল বাংলাদেশ ক্যাম্পাস, (জহুরি মহল্লা, শ্যামলী), (বিজিবি মার্কেট,গাবতলী), (পুলপাড়,বটতলী, বুদ্ধিজীবী,মোহাম্মদপুর) (চাঁদ উদ্যান, মোহাম্মাদপুর)। এই চারটি স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি শিশুদের বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে থাকে।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছর। প্রায় সবাই কাজ করে খাওয়া শিশু। তাই অনেকেই নিয়মিত না। নাঈম প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে বোতল কুড়ায়। বিকেলে পড়তে চলে আসে।

স্কুলের সরঞ্জাম বলতে বসার জন্য মাদুর, আদর্শলিপি বই, খাতা, কলম-পেনসিল, সাদা বোর্ড ও একটি মার্কার। খোলা আকাশের নিচেই চলে পড়াশোনা। সপ্তাহে শুক্র, রবি ও মঙ্গলবার বিকেলে দুই ঘণ্টা এ স্কুল চলে।

২০১৬ সালে পার্কেই পাটিতে বসে শিশুদের শেখাতেন সোহেল। তখন শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। সেই বছরের শেষের দিকে ‘নীড়’ লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্থপতি মো. মোবাশ্বের হোসেন স্যার এসে শিশুদের লেখাপড়া শেখানো দেখতে । তখন ভদ্রলোক শিশুদের সুবিদার কথা চিন্তা করে একটি বাসা ভাড়া করে দিন তিনি।

সোহেল রানা তার আত্মতৃপ্তি থেকে এই উদ্যোগ শুরু করেন ।পরে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং শিশুদের স্বনির্ভর করার জন্য পরিকল্পনা করেন তিনি। তিনি সমাজের বিত্তবান ও হূদয়বান এবং সবল শ্রেণি পেশার মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

বর্তমানে ফেডারেশন অফ বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা- ‘ফোবানা’ এর সহায়তায় দুস্থ, অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ছায়াতল বাংলাদেশ’।

শিশুর মধ্যে রয়েছে, সুপ্ত সম্ভাবনা যা সমাজ ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। যারা আগামীতে, বিশ্ব দরবারে আমাদের দেশকে মর্যাদার স্থানে নিয়ে যাবে, তারাই যদি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষার অধিকারসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে আমাদের দেশকে মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে তুলে ধরবে কে বা কারা?
পরিপূর্ণ শিশু বিকাশ ও শিশু উন্নয়ন ব্যাহত হলে জাতি মেধাশূন্য নেতৃত্ব পাবে। থেমে যাবে জাতির অগ্রগতি। তাই সকল শিশুর সঠিক পরিচর্যা হওয়া জরুরি।

শুধু সরকার নয় বরং প্রতিটি নাগরিককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে গরিব অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায়, করুণা হিসাবে নয় বরং কর্তব্য ভেবে এগিয়ে আসতে হবে। এরাই একদিন বাংলাদেশকে বিশ্বের উঁচু মর্যাদায় নিয়ে যাবে। আজকের পথকলিরাই উপহার দেবে সোনার বাংলা।