অনলাইনের এই দুনিয়ায় আমাদের সমাজে নারীরা নিজ গুনে পরিশ্রমে এবং যোগ্যতায় পুরুষদের পাশাপাশি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এত করে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। নারীরা নতুন ভাবে আত্নপ্রকাশ করছে অনলাইন ব্যবসার প্রবর্তনের ফলে। তাতে করে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। তেমনি একজন ওয়াহিদা।
ওয়াহিদার জন্ম সিলেট জেলায়। পূণ্যভূমি সিলেটের মাটিতে শৈশব, কৈশোরে বেড়ে উঠেছে ওয়াহিদা। শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া থেকে এস এস সি শেষ করেন এবং শহরের আরেক খ্যাতনামা মুরারি চাঁদ (এম.সি) কলেজ থেকে (বিজ্ঞান বিভাগ) নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসনে ভর্তি হল তৃতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় ওয়াহিদাকে। এর ফলে বৈবাহিক সূত্রে ওয়াহিদাকে পাড়ি জমাতে হয় বিলেতে। পরবর্তীতে যুক্তরােষ্ট্র আসার পর বর্তমানে ভিডিও ব্লগিং এর মাধ্যমে ওয়াহিদা মিশিগানের জনপ্রিয় মুখ। তার ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘ওয়াহিদ’স টাইনি ওয়ার্ল্ড (Wahida’s Tiny World)।’ এই চ্যানেল এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে লাখ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ওয়াহিদা ।
এই সময়ে বাংলাদেশের সকল নারী ব্লগার মধ্যে প্রথম সারির একজন সফল ব্লগার তিনি। বর্তমানে তিনি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ ওয়াহিদা’স টাইনি ওয়ার্ল্ড নামে লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে পরিচিত।
সংস্কৃতিমনা ওয়াহিদার শৈশব থেকেই ব্যক্তিগত অর্জন ছিল অনেক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে অর্জন করেছেন বিভিন্ন পুরস্কার। সিলেট রোটারি ক্লাব আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বক্তার খেতাবও পেয়েছেন তিনি।
ভালবাসার কাঙাল ওয়াহিদা চাইতেন সকলের ভালবাসা পেতে। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন নিজেকে একটি আলাদা পরিচয়ে গড়ে তুলতে এবং নিজের নামটা সবার কাছে বেচে থাকুক কোন ভাল কাজের দ্বারা । ওয়াহিদা সেই লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করে চলেছেন অবিরত।
অদম্য শক্তি নিয়ে লেগে থাকা ওয়াহিদার ব্লগিং শুরুর দিকে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে অনেক বাধা, বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু সফলতার পর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে গ্রহনযোগ্যতাও বেড়েছে। ব্লগিং করে যে ঘরে বসে কিছু করা যায়, অন্যকে অনুপ্রাণিত করা যায়, অন্যের মুখে হাসি ফোটানো যায় তা এখন কারোরই অজানা নয়।
নিজে কিছু করতে হলে অনেক বেশি ধৈর্য্য, ইচ্ছাশক্তি, ও মনোবল থাকতে হবে। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে এখন ওয়াহিদাকে দেখে হাজারো নারী স্বপ্ন দেখে।
নতুন নারীদের উদ্যোক্তাদের নিয়ে ওয়াহিদা বলেন, যে কোন নারীকে কোন কিছু শুরু করতে হলে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। আর আত্মবিশ্বাস এমন একটা বিষয় যেটা না থাকলে মানুষ কোনো কাজে অগ্রসর হতে পারে না। ব্যবসায়ে সাফল্য লাভের জন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যতক্ষণ না আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছেন ততক্ষণ কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। তাছাড়া নারীরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্ষমতার অপ্রতুলতার জন্য পরিচিত। তাই যেকোনো ক্ষেত্রে লড়াই করে এবং ব্যর্থতাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির মাধ্যমে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার যদি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকে তবে কোনও বিনিয়োগকারী আপনার সাথে বিনিয়োগ করবে না। এমনকি আপনার অধীনস্থ কর্মীরাও আপনার সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। অতএব, আজ থেকেই নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ শুরু করুন। নিজের প্রতিভাগুলোকে বড় করে দেখুন আর ভাবুন পৃথিবী আপনার এই প্রতিভাগুলোকেই চায়। নিজের গুণাবলীগুলোতে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করুন।
সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহিদা বলেন, আমার ফেসবুক গ্রুপ ওয়াহিদা’স টাইনি ওয়ার্ল্ড এ প্রতি শুক্রবার নতুন সব বোনদের চ্যানেল লিংক শেয়ার করার সুযোগ দিচ্ছি। সেখানে হাজারো লিংক শেয়ার করা দেখলে নিজের মনটা খুশিতে ভরে যায় এবং আমাদের কমিউনিটির লোকাল বিজনেসও যাতে পরিচিতি পায় সেটাও খেয়াল রাখি ঐ গ্রুপে। এছাড়াও তিনি বলেন আমার স্বপ্ন যে এভাবে পূর্ণ হবে তা কল্পনাও করিনি। মানুষের মুখের যখন শুনি আমার ব্লগ দেখে উপকার পান, রেসিপি ট্রাই করেন, আনন্দ পান তখন সত্যিই খুব ভাল লাগে।
আরও পড়ুন: একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মিশিগানের শারমিন তানিম
কমিউনিটি নিয়ে ওয়াহিদা বলেন, বাচ্চারা ছোট থাকায় অনেক কাজই আপাতত স্থগিত রেখেছেন। ওরা বড় হলে কমিউনিটির জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে। উনার চ্যারিটি গ্রুপ “কাইন্ড হার্টেড পিপলস”-কে ও সামনে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছি। কেননা একটা সময় এই গ্রুপের মাধ্যমেই বাংলাদেশের অনেক ছিন্নমূল এবং হত দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
নিজের দেশ এবং দেশের মানুষকে প্রচণ্ড মিস করেন ওয়াহিদা। মানুষের এতো ভালোবাসায় নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে করেন তিনি। সকলের ভালবাসা নিয়ে এভাবেই সামনে এগিয়ে যেতে চাই ওয়াহিদা।
মন্তব্য করুন