বিজয়া দশমীতে ভারত বাংলার কুশিয়ারার দুই পার করিমগঞ্জ ও জকিগঞ্জ একাকার
# পুজোর দিনগুলো সীমান্ত শহর জন সমুদ্র, তিনদিনে বিসর্জন
# বাংলাদেশ থেকে দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী সেতু নির্মাণ করার দাবি
বিসর্জন কে সামনে রেখে কুশিয়ারার এপার ওপার একাকার । উত্তর পূর্বাঞ্চলে এমন নিদর্শন নজিরবিহীন বলা যায়। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন কে কেন্দ্র করে কুশিয়ারা নদীতে ভারতের করিমগঞ্জ এবং বাংলাদেশের জকিগঞ্জ একাকার। সীমান্তের দুই পারে হাজার হাজার লোক সমাগম দেখে মনে হয় নি যেন এক দেশ । যদিও আজ থেকে ৭৭ বছর আগে এক দেশ ছিলো কিন্তু রাজনৈতিক কারণে দেশ ভাগের ফলে বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান ছিলো । ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পৃথক হয়ে যায় কিন্ত এক মাত্র দুর্গাপূজার বিসর্জনের দিন আন্তর্জাতিক সব বাধা কে উপেক্ষা করে মানুষের মনের মিল যেন একাকার হয়ে যায় । তবে নিয়ম মাফিক ভারতে বি এস এফ এবং বাংলাদেশের বি ডি বি সীমান্তে করা সুরক্ষারর ব্যবস্তা করা হয় । বি এস এফ ও এস ডি আর এফ স্প্রিট বোড নিয়ে সর্বক্ষণ সুরক্ষায় ছিলো ।
ভারত থেকে প্রতিবারের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জকিগঞ্জের প্রশাসনিক অধিকারিকদের হাতে মিষ্টি উপহার তুলে দেওয়া হয় কিন্তু করুণার পর থেকে সেই মিষ্টি আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় । দশমীর দিনে সব থেকে বিরল দৃশ্য তখন দেখা যায় যখন বাংলাদেশের উজানদিক থেকে বড় বড় প্রতিমা নৌকো সহকারে নিয়ে আসা হয় তাদের দেশের ; জকিগঞ্জের বিসর্জন ঘাটে কারণ ভারতের করিমগঞ্জের মত সেদেশে বিসর্জন হয় । এক নদী .এক প্রতিমা .এক ভাষা .এক সংস্কৃতি.এক মনের মিল শুধু দুটি দেশ রাজনৈতি ভাবে পৃথক করে দিলেও মানুষের মধ্যে মহা মিলনে দুই পারে মানুষের মধ্যে উল্লাসে ও আবেগের অনুভূতিদেখা যায় । প্রথম বিসর্জনে করিমগঞ্জের বিসর্জন ঘাটে সকাল নটা থেকে রাত আড়াইটা তিনটা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন হয় । অনুরূপ ভাবে বাংলাদেশের জকিগঞ্জে প্রায় পঁচিশ ত্রিশটি প্রতিমা নিয়ে আসা হয় । এদিকে করিমগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জন সটিক সুষ্ট; ভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপস্তিত ছিলেন জেলা শাসক মৃদুল যাদব, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এএসটিসির চেয়ারম্যন মিশন রঞ্জন দাস, পুরপতি রবীন্দ্র দেব, উপ পুরপতি সুখেন্দু দাস,জেলা বিজেপির সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য্য ।
বিসর্জন ঘাটে সাক্ষাৎ কারে জেলা শাসক মৃদুল যাদব বলেন অন্যান্য উৎসবের থেকে দুর্গা পূজার আনন্দটাই আলাদা। তিনি বলেন বেশ কয়েকটি পূজায় গিয়েছি বেশ ভালো লাগলো। জেলায় আট শতাধিক পূজা এখন পর্যন্ত গোটা জেলায় শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। সম্পূর্ণ শান্তি পূর্নভাবে সমাপ্ত হয়। তিনি বলেন জেলার সব সম্প্রদায়ের মানুষের পূর্ণ সহয়গিতায় এতো বড় উৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত হয়। এর জন্য সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান ।
বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন দুর্গা পূজা সনাতনীদের ধর্মীয় আবেগ আবার দেশ বিদেশের কাছে দুর্গাপূজা মানে জাতীয় উৎসব । এই উৎসবে কোন না কোন ভাবে আমার সবাই জড়িত । উৎসব যে মানুষের মধ্যে মিলন ঘটায় তার প্রমাণ দুর্গাপূজা ।
এ এস টি সির চেয়ারম্যান মিশন রঞ্জন দাস বলেন মানুষ রাজনীতি সামাজিক বৈষম্যকে দূরের সরিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতে উটেন । এই সম্প্রীতি যুগ যুগান্তর থেকে চলে আসছে । ছোট খাটো দু একটি ঘটনা ছেড়ে দিলে পুজোর দিন গুলি ছিলো শান্তি শৃঙ্খলা । তিনি বলেন বিগত বছরের থেকে এবার লোক সমাগম ছিলো অনেক ।
পঞ্চমী ,ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী শহরের উপচেপড়া ভীড় ছিলো তবে নমোমির রাতে ছিলো জন সমুদ্র । সারা রাত লোক সমাগম ছিলো দেখার মতো ।
পুরপতি রবীন্দ্র দেব বলেন প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল থাকায় মানুষ পুজোর সব কতিদিন আনন্দে মেতে উঠেছেন । তবে এবার নদীর জল কমে যাওয়ার ফলে প্রতিমা বিসর্জনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পুরসভা বিসর্জন ঘাটে সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রাক্তন উপ পুরপতি পার্থ সারথি দাস বলেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই দৃশ্য শুধু করিমগঞ্জেই দেখা যায় । জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই বিসর্জন ঘাটে অংশ নেন এপার ভারত ওপার বাংলা বিসর্জনের দিন যেন একাকার । ছাড়া পূজার সময় দেশ বিদেশে থাকা করিমগঞ্জের লোকরা ছুটে আসেন নিজ জেলায় ।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন করিমগঞ্জে পূজার আনন্দ একটু আলদা কারন এখনের মানুষ প্রশাসন কে সব ধরনের সহ যোগিতা করে যাচ্ছেন। তবে সব থেকে ভালো লাগার জায়গা বিসর্জন ঘাটে । কারণ এখনে দু দেশ এক সঙ্গে একি উৎসব পালন করেন দুপারে হাজার হাজার লোক মানুষ আনন্দে মেতে উটেন । তবে পূজা শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পূর্ণ হওয়ায় সর্বস্তরের জনগণ কে ধন্যবাদ জানান ।
এদিকে বাংলাদেশের জকিগঞ্জের বিসর্জন ঘাটে সেদেশের জমায়ত স্থানে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি প্রশাসনিক আমলাদের অনেক বক্তা পুজোর নানা দিক তুলে ধরেন । তবে প্রায় সব বক্তা তাদের দেশের সরকারের নিকট আবেদন জানান আগামী দিনে ভারত বাংলা মৈত্রী সেতু নির্মাণ করার । বক্তাদের মতে এই সেতু নির্মাণ করা হলে দুইদেশের বাণিজ্য শিল্প সংস্কৃতির আরও শক্তিশালী । মানুষের মধ্যে ভাতৃত্বের মিলন হবে।
একি সঙ্গে ভারত সরকার কে এই মৈত্রী সেতুর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আবেদন জানান ।