অবশেষে জয় পেল বাংলাদেশ
চলমান বিশ্বকাপে পরপর ছয়টি ম্যাচ হেরে আলোচনা-সমালোচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১ম ম্যাচে জয়ের পর অবশেষে আজ ৮ম ম্যাচে জয় পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেটে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে ৭ উইকেটে ৪১.০ ওভারে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে যথারীতি ইনিংস উদ্বোধনে নামেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। শুরুতে ব্যাট হাতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন তামিম। ম্যাচের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই মধুশঙ্কার বলে সাজঘরের পথ ধরেন তামিম। যাবার আগে দলের জন্য ৯ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
তামিমের বিদায়ে মাঠে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর স্কোরকার্ডে কিছু রান যোগ করেন লিটন। তবে ম্যাচের সপ্তম ওভারে মধুশঙ্কার গতিতে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন লিটন। তার আগে ২৩ রান করেন। এরপর ক্রিজে আসেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেন শান্ত। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটির দেখা পান শান্ত। এ দু’জনের ব্যাট থেকে আসে ১৬৯ রান। বাংলাদেশের দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ফিফটি তুলে নেন সাকিবও। তবে ম্যাথিউজের বলে ৮২ রানে থেমেছে টাইগার দলপতির ইনিংস।
এদিকে সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসেও ম্যাথিউজের শিকার হন শান্ত। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৯০ করেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহমান। ব্যক্তিগত ১০ রানে আউট হন মুশফিক। এরপর ক্রিজে আসেন তৌহিদ হৃদয়। ব্যক্তিগত ২২ রানে বিদায় নেন মিস্টার ফিনিশার রিয়াদ। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মাত্র ৩ রানে ক্যাচ দিয়ে পিচ ছাড়েন তিনি। এরপর ব্যাটে আসেন তানজিম সাকিব। তৌহিদ হৃদয় ১৫ এবং তানজিম শাকিব ৫ রান করে জয় তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়েন। লঙ্কানদের হয়ে দিলশান মাদুসান ৩টি, থেকশান ও অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউস ২টি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেননি লঙ্কানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই টাইগারদের আনন্দে ভাসান শরিফুল ইসলাম। ওভারের শেষ বলে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন কুশল পেরেরা। আউট হবার আগে মাত্র ৪ রান করেন এই ব্যাটার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের বাকিটা সময় নির্বিঘ্নে কাটান দুজন, গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি। ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটি ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক। দলীয় ৬৬ রানে লঙ্কান অধিনায়ক ফেরেন ১৯ রানে।
সঙ্গীর বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কাও। দলীয় ৭২ রানে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪১ রান। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কা।
দুই মিডেল অর্ডার ব্যাটার মিলে বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন। ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠা জুটি ২৫তম ওভারে ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। দলীয় ১৩৫ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে সাদিরা সাজঘরে ফিরে গেলে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তবে সেই ওভারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে ভিন্ন রকম এক ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫তম ওভারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথিউস। কোনো বল খেলার আগেই টাইমড আউট হয়ে গেছেন তিনি। যে হেলমেট নিয়ে নেমেছিলেন, তাতে পুরো নিরাপদ বোধ করেননি তিনি। ফলে আরেকটি হেলমেট আনা হয়, কিন্তু সেটিও উপযুক্ত মনে করেননি এই ব্যাটার। এসবের মাঝে সময় গড়াতে থাকে, ফলে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আবেদন করলে আম্পায়াররা আউট ঘোষণা দেন।
ফলে কোন বল না খেলেই সাজঘরে ফিরেন ম্যাথিউস। দলীয় ১৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটলেও দলের রানের চাকা সচল রাখেন চারিথ আসালঙ্কা।
শেষ দিকে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও মাহিথ থিকসানাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় রানের পুঁজি নিশ্চিত করেন আসালঙ্কা। সেই সঙ্গে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ শতক। এই বাঁহাতি ব্যাটারের শতকে ভর করে ৪৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেন আসালঙ্কা। টাইগারদের হয়ে ৩টি উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।